ত্রিপলের নীচে সংসার। সুন্দরপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নানুরের বন্যা-বিধ্বস্ত গ্রাম সুন্দরপুরের মানুষের।
এখনও শুরুই হয়নি অজয় নদের জলে তছনছ হওয়া ওই গ্রাম পুনর্গঠনের কাজ। পুজোর মুখে অজয়ের বাঁধ ভেঙে সুন্দরপুরের ১১৮টি পরিবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। বন্যার দিন থেকেই লাগোয়া অজয় নদের পাড়ে ত্রিপলের তাঁবুতে তাঁদের দিন কাটছে। নিম্নচাপজনিত বৃষ্টি তাঁদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ বন্যার পরে পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রাম পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিল জেলা প্রশাসন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েকটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর সেই কাজ ক’দিন চললেও তার পর থেকে থমকে গিয়েছে। মঙ্গলবার সুন্দরপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাঁধের ওপরে গ্রামবাসীরা সন্তান নিয়ে ত্রিপলের তাঁবুতে জবুথুবু হয়ে বসে আছেন। তাঁদের মধ্যে অনিল থান্দার, কালু ঘোষরা বললেন, ‘‘সেই দিন থেকে বাচ্চা ছেলেমেয়ে আর বৃদ্ধদের নিয়ে বাঁধের উপরে পড়ে রয়েছি। বৃষ্টিতে ত্রিপল ঘেমে টুপটাপ করে জল পড়ছে। নদের জোলো হাওয়া এখন থেকেই কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। শীতটা কী করে কাটবে, তাই ভাবছি।’’
বিডিও (নানুর) শৌভিক ঘোষাল বলেন, ‘‘প্রকৃতিগত কারণেই সুন্দরপুর এখনই পুনর্গঠন সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। তাই সংলগ্ন একটি ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী পুনর্বাসনের কথা ভাবা হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর পরে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
বন্যা-দুর্গতদের আরও অভিযোগ, এ দিন থেকেই তাঁদের রান্না করা খাবার দেওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই এ দিন বহু পরিবারের শুকনো খাবার খেয়ে দিন কেটেছে। কয়কে জন বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। কিন্তু, আজ থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের চিঁড়ে মুড়ি খেয়ে থাকতে হয়েছে। ত্রিপলের তাঁবুতে তো রান্না করা যাবে না।’’ বিডিও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের কমিউনিটি কিচেন থেকে দু’বেলা রান্না করা খাবার দেওয়ার কথা। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।