কৃষকদের সমর্থনের বাম এবং কংগ্রেসের মিছিল। হাজরা থেকে পার্ক সার্কাসের পথে। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রের কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং দিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলের উপরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে প্রজাতন্ত্র দিবসে উত্তাল হল কলকাতাও। শহরের পথে নেমে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হলেন বিভিন্ন বাম দল ও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। দিল্লির আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে জেলায় জেলায় হল ট্রাক্টর মিছিল। শহরের রাজপথেও দেখা গেল ট্রাক্টর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশিই বাম ও কংগ্রেস নেতারা রাজ্যবাসীর কাছে আহ্বান জানালেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার চেহারা কেমন হতে পারে, মানুষ যেন এখনই বুঝে নেন!
দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে জেলায় জেলায় কর্মসূচি এবং কলকাতায় জোড়া মিছিলের ডাক দেওয়া ছিল আগেই। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির ট্রাক্টর মিছিলের উপরে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চালানোর খবর আসার পরেই সেই কর্মসূচি প্রতিবাদের চেহারা নেয়। কৃষি বিলের প্রতিলিপির সঙ্গে সঙ্গেই পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের কুশপুতুল। ভিড়ে ঠাসা মিছিল থেকে মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, কৃষি আন্দোলনের উপরে দমন-পীড়ন চললে বাংলার কৃষকেরাও চুপ করে বসে থাকবেন না।
রাজাবাজার ও হাজরা মোড় থেকে এ দিন বিকালে দু’টি মিছিল পার্ক সার্কাসে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের সামনে গিয়ে মিলিত হয়। মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজরা থেকে মিছিলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রদের সঙ্গে ছিলেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। রাজাবাজারের মিছিলে ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেসের অমিতাভ চক্রবর্তী, কামারুজ্জামানেরা। দুই মিছিল এসে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের সামনে মেলার পরে অস্থায়ী মঞ্চে প্রতিবাদ-সভা করেন বাম ও সহযোগী মিলে ১৬ দল এবং কংগ্রেস নেতারা।
সেলিম বলেন, ‘‘সাধারণতন্ত্র মানে রাজতন্ত্র নয় যে, মোদীজি ছাড়া কেউ রাস্তায় মিছিল করতে পারবে না! কৃষকেরা দু’মাস ঠান্ডায় অবস্থান করেছেন, আইনের প্রতিলিপি পুড়িয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ট্রাক্টর প্যারেড আজ দিল্লিতে ঢোকার সময়ে তাদের উপরে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস চালানো হয়েছে। এটা কি রাজতন্ত্র চলছে?’’ প্রদীপবাবুও বলেন, ‘‘সাধারণতন্ত্র দিবসে সংবিধানে দেওয়া নাগরিকের অধিকার কেড়ে নিয়েছে মোদী সরকার। এর আগে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদও তারা গায়ের জোরে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।’’ সব বক্তারই এ দিন সুর ছিল, বাংলার মানুষকে বুঝতে হবে বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কী হতে পারে।
বর্ধমান, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ নানা জেলাতেই ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, বাইক নিয়ে মিছিল করেছে কৃষক, ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি। কলকাতায় ট্রাক্টর সামনে রেখে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে এসইউসি। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতার পাশাপাশিই আন্দোলনের গণ-কমিটি গড়ার ডাক দিয়ে প্রতিবাদে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন সাংসদ তরুণ মণ্ডলেরা।
ঘোষিত কর্মসূচির বাইরে এ দিন দিল্লিতে কৃষকদের উপরে পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে বিধান ভবন থেকে আলাদা একটি মিছিল করে কংগ্রেস। দলের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, মধ্য কলকাতা জেলা সভাপতি সুমন পালেরা ওই মিছিল নিয়ে মৌলালি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।