পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ধর্মতলায় বিক্ষুব্ধরা। নিজস্ব চিত্র
ধর্মতলায় টিএমসিপির ধর্না মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছতেই উত্তাল হয়ে উঠল গোটা এলাকা। রাজভবনে মোদী-মমতা বৈঠক চলাকালীল যারা সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, পুলিশের বৈঠক ভেঙে তারাই এগিয়ে গেলেন ধর্না মঞ্চের দিকে। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, ‘কেন আপনি নরেন্দ্র মোদীকে এ রাজ্যে অ্যালাও করলেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চ থেকে ছাত্রদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। পাল্টা স্লোগান তুলতে থাকে ছাত্ররা। তাঁদের বক্তব্য, ‘পুরোটাই সেটিং’।
এ দিন মিলেনিয়াম পার্ক থেকে টিএমসিপির ধর্না মঞ্চে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। পড়ুয়াদের তিনটি মিছিল সেই সময়েই ‘আজাদি’-র স্লোগান তুলতে তুলতে এগিয়ে আসে মঞ্চের দিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। পরপর ভেঙে যেতে থাকে ব্যারিকেড। বাম ছাত্ররা প্রশ্ন করতে থাকেন , কেন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলেন।
এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী দুপুরেই দিয়েছিলেন। রাজভবনের বৈঠক সেরে বেরিয়ে তিনি বলেছিলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতেই তিনি রাজভবনে এসেছিলেন। মঞ্চ থেকে সে কথাই ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল এটি। তাঁর কথায় ‘‘আমরা নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে আসিনি। ওঁর এসপিজি ওঁকে নিয়ে এসেছেন। আমাদের প্রোটোকল আছে। যখন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি আসেন বা যদি অন্য কোনও দেশের কোনও অতিথি আসেন, তখন আমাদের তরফে মিনিস্টার ইনভাইটি পাঠাতে হয়। মনে রাখবেন আমি যাইনি। পাঠিয়েছিলাম ফিরহাদ হাকিমকে। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই একজন।’’
যদিও ছাত্ররা সে কথা মানতে চায়নি। বারবার বুঝিয়েও ছাত্রদের প্রশমিত করতে ব্যর্থ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা একটাই আন্দোলন করছি। আপনারা একটা আন্দোলন করছেন। একই ইস্যু। আপনারা সবাই মিলে আন্দোলন করুন। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করুন।’ ’
পুলিশ তৎপরতায় এর পর বিক্ষুব্ধদের একটা অংশকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে তাতে। যদিও কিছু বিক্ষোভকারী মঞ্চের থেকেই যান। মুখ্যমন্ত্রী ধর্না মঞ্চে সব ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতাদের আসার নির্দেশ দেন। তখন ধীরে ধীরে ওই জায়গা ছাড়তে শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় টিএমসিপির এই ধর্নামঞ্চ দিনভরই ছিল বেশ নিষ্প্রভ। মমতা প্রথম বার আসতেই অবশ্য চাঙ্গা হয় মঞ্চ। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘এই বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল এনআরসি বিরোধিতা। আমি শেষ দিন পর্যন্ত এর বিরোধিতাই করে যাব। আমি সমস্ত পড়ুয়াদের আমার সমর্থন জানাচ্ছি। সবাই একসাথে লড়ুন। কেন্দ্রীয় সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করেছে, তা কাগজে কলমেই থাকবে, আমরা লাগু করব না, এই আমার বিশ্বাস।’’ এরপরে মমতা চলে যান মিলিনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে ধর্না মঞ্চে ফেরত আসতেই শুরু হয় ঝামেলা। চলতে থাকে স্লোগানের লড়াই। আজাদি স্লোগানের পাল্টা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্ররা ‘আমরা কারা নাগরিক’ স্লোগান তুলতে থাকে।