কোর্টে না গিয়ে অফিসে আসুন: পার্থ

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ বঞ্চনা ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। অব্যাহত অনশনও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এর পিছনে বিরোধীদের উস্কানিই দেখছেন। তাদের কাঠগড়ায় তুলে শনিবার পার্থবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে চাকরিপ্রার্থীরা আদালতে না-গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে আসুক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ বঞ্চনা ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। অব্যাহত অনশনও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এর পিছনে বিরোধীদের উস্কানিই দেখছেন। তাদের কাঠগড়ায় তুলে শনিবার পার্থবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে চাকরিপ্রার্থীরা আদালতে না-গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে আসুক। দরকার হলে বিশেষ সেল খুলে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে খাতাও দেখিয়ে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

এ দিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান শিক্ষামন্ত্রী। আর বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দফতরের অধীন পর্ষদের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ সরিয়ে রেখে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম, গেরুয়া (বিজেপি), তেরঙ্গা (কংগ্রেস) সকলে মিলে চক্রান্ত করছে। উস্কানি দিচ্ছে। মূলত বামেরাই চাকরিপ্রার্থীদের আদালতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।’’ মন্ত্রীর বক্রোক্তি, ‘‘এখন তো কালো কোট লাল কোট হয়ে গিয়েছে!’’

শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন, সুষ্ঠু ভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করার কাজে বাধা দিতেই বিরোধীরা চাকরিপ্রার্থীদের ব্যবহার করছেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতি করতে তাঁর আবেদন, ‘‘উস্কানিতে পা দেবেন না। স্বচ্ছ পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হয়েছে। নিয়োগও হচ্ছে স্বচ্ছ ভাবে।’’ পার্থবাবুর আশ্বাস— ‘‘ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আবার চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হবে।’’ সাধারণ প্রার্থীদের একাংশকে পার্শ্বশিক্ষক বলে পর্ষদ উল্লেখ করেছে, এই অভিযোগেই জেলায় জেলায় গত ক’দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে শিক্ষামন্ত্রীর পাল্টা দাবি, ‘‘ওএমআর শিটে পরীক্ষার্থীরা যা লিখেছেন, সেই মতোই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিক্ষোভের কী আছে?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ছেলেকে নিয়ে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ, মৃত্যু মায়ের

শিক্ষামন্ত্রীর স্বচ্ছতার দাবি সত্ত্বেও বিক্ষোভ কিন্তু কমছে না। কাউন্সেলিংয়ের পরে নথি দেখাতে না পারার অভিযোগ তুলে চার দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে বর্ধমানে প্রাথমিক স্কুল সংসদ অফিসের সামনে। শুক্রবার রাত থেকে শ’দেড়েক প্রার্থী রিলে অনশন শুরু করেছেন। জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২৭ ফেব্রুয়ারি ফের প্রার্থীদের মুখোমুখি বসিয়ে নথি পরীক্ষা করা হবে। তখনই বোঝা যাবে, ভুল কাদের। যদি আমাদের তরফে কোনও ভুল হয় তা হলে রাজ্যকে জানানো হবে।” ওই নথি পরীক্ষার সময় এক জন ম্যাজিস্ট্রেট হাজির থাকবেন। প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ ভিডিও রেকর্ডিং হবে।

টেট পাশ করা ‘ওয়াই’ নামের এক আবেদনকারীকে নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে। দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইটে নামের জায়গায় শুধু ‘ওয়াই’ লিখে এবং ন’সংখ্যার একটি রোল নম্বর দিলেই ফল বেরিয়ে আসছে। সেখানে তাঁকে প্যানেলভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁকে নিয়োগের জন্য ডাকা হয়েছে। নাম এবং পদবী ছাড়া কারওর নাম ‘ওয়াই’ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পর্ষদেরই একাংশ। পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, ‘‘কোনও ভাবে ওটা ভুল হয়ে গিয়েছে। ঠিক করে নেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, নামটি ছাড়া বাকি সব তথ্য ঠিকই রয়েছে।

সপ্তাহখানেক আগে বিধানসভায় পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার শূন্য শিক্ষক পদে নিয়োগ সম্পন্ন করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু জেলায় জেলায় যে ভাবে বিক্ষোভ-আন্দোলন দানা বাঁধছে, তাতে ওই সময়সীমার মধ্যে তা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা খোদ শিক্ষামন্ত্রীর। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস জানিয়েছে, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রত্যেক জেলায় প্রশাসনিক দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাবে দলের কর্মী-সমর্থকেরা। খড়্গপুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ‘‘এসএমএসে চাকরির ডাক আসছে। এতেই স্পষ্ট, কেবল তৃণমূলের লোকজন চাকরি পাচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement