গণপ্রহার নিয়ে নয়া বিলে প্রাণদণ্ড কেন, শুরু বিতর্ক

গণপ্রহার প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের প্রাথমিক বিলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার কথা ছিল।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২১
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

পদ্ধতিগত বিতর্ক থাকলেও বিনা বিরোধিতায় বিধানসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল। কিন্তু সেই বিলে গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রাণদণ্ডের বিধান থাকায় দানা বেঁধেছে অন্য বিতর্ক। আন্তর্জাতিক স্তরের বিতর্ক এবং প্রথার কথা স্মরণ করিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে নানা বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠন।

Advertisement

গণপ্রহার প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের প্রাথমিক বিলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার কথা ছিল। কিন্তু যে বিল পেশ ও পাশ হয়েছে, তাতে শেষ মুহূর্তে প্রাণদণ্ডের সংস্থান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিরোধী দল কংগ্রেসের বিধায়ক অসিত মিত্র বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে বিশেষজ্ঞ-সহ নানা মহলের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একই দাবি বামেদেরও। কিন্তু সেই দাবি না মেনে পাশ হওয়া বিল আপাতত রাজভবনের সম্মতির অপেক্ষায়। সরকার পক্ষের বক্তব্য, গণপ্রহার ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে কড়া হাতে মোকাবিলার জন্যই প্রাণদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে। যে যুক্তির সঙ্গে একেবারেই সহমত নন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের বড় অংশ।

জাতীয় আইন কমিশন চার বছর আগে সুপারিশ করেছে, দেশ থেকে প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা অবলুপ্ত করা হোক। সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগ এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতিসাধন করে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধানোর ষড়যন্ত্রের’ ক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম হতে পারে। ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ যুক্তি দিয়ে নানা সময়ে আদালত যে প্রাণদণ্ডের রায় দেয়, তারও বিরোধিতা করেছে কমিশন। দেশ থেকে প্রাণদণ্ড এখনও উঠে না গেলেও নতুন আইন করার সময়ে কেন ‘আদিম প্রথা’কে মান্যতা দেওয়া হল, বিতর্ক দেখা দিয়েছে সেই প্রশ্নেই।

Advertisement

এপিডিআরের নেতা রঞ্জিত শূরের বক্তব্য, ‘‘জেলকে এখন সংশোধনাগার বলা হয়। সারা পৃথিবীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই এখন সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে স্বীকৃত। এই সময়ে নতুন একটা বিলে প্রাণদণ্ডের সংস্থান পশ্চাদগামী চিন্তার প্রতিফলন।’’ নিম্ন আদালতে গত কয়েক বছরে প্রাণদণ্ড দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে বলে উল্লেখ করে রঞ্জিতবাবুর প্রশ্ন, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সরকার কি এই ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় নামতে চায়? কয়েক দিনের মধ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই বিলের বিষয়ে কথা বলতে চায় এপিডিআর।

একই বিষয়ে বিধানসভার স্পিকার এবং রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে ফের তৎপর হতে চাইছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিধানসভাকে কার্যত অন্ধকারে রেখে শেষ মুহূর্তে প্রাণদণ্ডের কথা ঢোকানো হয়েছিল। বিশদে আলোচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে বিল পাঠানো প্রয়োজন ছিল।’’ সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষেরও মত, একেবারে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রাণদণ্ডে ‘মোরিটেরিয়াম’ রাখার পক্ষপাতী।

সরকারি সূত্রে খবর, প্রাণদণ্ড ঘিরে এই বিতর্কের দিকটি নিয়ে বিল তৈরির সময়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা হয়নি। তবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘গণপ্রহারের ঘটনা ঘিরে দেশ জুড়ে যা পরিস্থিতি, বিশ্বের অন্য কোথাও তা নেই। কড়া হাতে এই বিপদ মোকাবিলার লক্ষ্যেই এমন সংস্থান বিলে রাখা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement