প্রতীকী ছবি।
অতিমারিতে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা, এমনকি রোগ প্রতিরোধক কর্মসূচি কমবেশি মার খেয়েছে ও খাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে: প্রতিদিন খাবারে যে-নুন দেওয়া হয়, তার গুণগত মান আদৌ বজায় আছে কি? তাতে যতটা আয়োডিন থাকার কথা, সেই মাত্রা কি মেনে চলা হচ্ছে? প্রতি মাসে সব জেলার নুনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু করোনায় সেই কর্মসূচিও ধাক্কা খেয়েছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ।
কেন্দ্রের প্রকল্প ‘ন্যাশনাল আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি ডিজ়অর্ডার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর অধীনে প্রতি মাসে রাজ্যের ২৭টি জেলা (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) থেকে অন্তত ২০টি করে নমুনা সংগ্রহের পরে পরীক্ষা করে দেখা হয়, তাতে ১৫ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) আয়োডিন রয়েছে কি না। যদি পিপিএম ওই মাত্রার কম হয়, সেটিকে আয়োডিনযুক্ত নুন বলে গণ্য করা হবে না। কিন্তু গত ডিসেম্বরে রাজ্যের ১৩ জেলায় কোনও নমুনাই সংগ্রহ করা হয়নি। বাকি যে-চোদ্দোটি জেলায় পরীক্ষা করা হয়েছিল, সেখানেও নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ওই জেলাগুলি মিলিয়ে মাত্র ১২৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২৬টি নমুনায় ১৫ পিপিএমের কম আয়োডিন রয়েছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তরফে সম্প্রতি সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে, কোনও ভাবেই নুনের নমুনা পরীক্ষায় ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। কেন এত জোর দেওয়া হচ্ছে লবণ পরীক্ষায়?
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, ভারতের মাটিতে আয়োডিনের পরিমাণ কম। ফলে যে-আনাজ মানুষ খাচ্ছেন, তার মাধ্যমে ঠিক পরিমাণে আয়োডিন শরীরে প্রবেশ করে না। তাই নুনের সঙ্গে আয়োডিন মেশাতে হয়। চিকিৎসকেরা জানান, আয়োডিনের ঘাটতিতে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো ঘটে না। বড়দের হাইপো থাইরয়েড এবং স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, “আয়োডিনযুক্ত নুন যথাযথ মাত্রায় শরীরে না-গেলে আয়োডিনের অভাব দেখা দেবে। তার ফলে যে-সব রোগ দেখা দেবে, সেগুলি প্রতিরোধ করা গেলেও পুরোপুরি সারানো যাবে না। তাই নুন কেনার সময় মানুষকে সচেতন হয়ে আয়োডিনযুক্ত নুন কিনতে হবে। দেখে নিতে হবে, উদিত সূর্যের লোগো এবং ১৫ পিপিএম বজায় রয়েছে কি না।”