সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা আর গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের স্কুলের শিক্ষকেরা কোনও রকম গৃহশিক্ষকতা বা কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এই মর্মে আগেই নির্দেশিকা জারি করেছিল শিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করেই এ বার স্কুলে শিক্ষকের চাকরি করেও গৃহশিক্ষকতা এবং কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিক্ষকদের একটি তালিকা শিক্ষা দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে গৃহশিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রাইভেট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। গত মার্চ মাসের ২২ তারিখে রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনের কাছে এই তালিকা পাঠিয়েছেন তাঁরা। সেই তালিকায় মোট ৩২ জন শিক্ষকের নাম জানানো হয়েছে। তাঁরা কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেন তালিকায় সেই বিষয়টিও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সদস্যেরা চান দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুক রাজ্য শিক্ষা দফতর। তাঁদের যুক্তি, শিক্ষা দফতরের তরফে স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া সত্ত্বেও, সরকারের সিদ্ধান্তের অবমাননা করেছেন ওই শিক্ষকেরা। তাই অবিলম্বে ওই সমস্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা আর গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না। এমনকি, যুক্ত থাকতে পারবেন না কোনও রকম কোচিং সেন্টারের সঙ্গেও। গত বছর জুন মাসে নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় শিক্ষা দফতর। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে কর্মরত কোনও শিক্ষক গৃহশিক্ষকতা বা কোনও রকম কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এমনকি বিনা পারিশ্রমিকেও কোথাও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে পারবেন না। স্কুলশিক্ষা দফতর এই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করার পাশাপাশি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনস্থ জেলার আধিকারিকদের মারফত স্কুলগুলির প্রধানশিক্ষকদের কাছেও সেই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, জেলা স্তরের স্কুল-ইন্সপেক্টরদের তরফে নির্দেশিকা জারি করে আরও জানানো হয়েছিল, কোনও জুনিয়র হাই স্কুল, হাই স্কুল অথবা কোনও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা বা অন্য কোনও ধরনের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
‘রাইট অব চিল্ড্রেন টু ফ্রি অ্যান্ড কম্পালসারি এডুকেশন অ্যাক্ট ২০০৯’-এর আওতায় এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সারা ভারতে স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরের যে নির্দেশিকা রয়েছে, তাতে এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। সেখানেই সরকারি স্কুলগুলিতে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য বিধিনিষেধের কথাও জানানো আছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের সতর্ক করতেই গত বছর ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। কারণ ওই সময়ে বিভিন্ন জেলা থেকে স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করা নিয়ে নানা অভিযোগ আসছিল। সেই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার পরে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ‘প্রাইভেট টিচার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের’ অভিযোগপত্রে দেখা যাচ্ছে, সেই নির্দেশিকায় গুরুত্ব দেননি রাজ্যের স্কুলশিক্ষকদের একাংশ।
সংগঠনের তরফ বাবুয়া মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে সরকারের অধীনে স্কুলশিক্ষকেরা চাকরি করছেন সেই সরকারের নির্দেশকে তাঁরা অমান্য করছেন। তাই আমরা চাই সরকারি নিয়ম যে সব শিক্ষকেরা ভেঙেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” প্রাইভেট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, প্রথম পর্যায়ে মাত্র ৩২ জন স্কুলশিক্ষকের নাম শিক্ষাসচিবের কাছে জমা দেওয়া হলেও তাঁদের কাছে প্রায় হাজারের বেশি স্কুলশিক্ষকের নাম রয়েছে, যাঁরা গৃহশিক্ষকতা কিংবা কোনও না কোনও কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। আগামী দিনে তাঁরা ওই সমস্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয় আইনি ব্যবস্থা নেবেন, নয় শিক্ষা দফতরকে তাঁদের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাবেন। তাঁদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর দাসের কথায়, “আমরা চাই সরকারি নিয়ম এবং দেশের আইন মেনে সকলে কাজ করুন। তাই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে ‘নীতিহীন’ স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি। এই বিষয়ে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।”