প্রতীকী ছবি।
শুধু সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসার খরচ স্থির করা ঠিক নয় বলে জানাল স্বাস্থ্য কমিশন। বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বিলসংক্রান্ত কয়েকটি মামলার শুনানিতে কমিশনের পর্যবেক্ষণ, বরং হাসপাতালে তাঁর কী কী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে, তার উপরেই খরচের বিল হওয়া বাঞ্ছনীয়।
তপসিয়ার আর-ফ্লেমিং হাসপাতালের বিরুদ্ধে কেষ্টপুরের বাসিন্দা বরুণ ভদ্রের পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, দশ দিন চিকিৎসা বাবদ তিন লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত বিল দেওয়া হয়নি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ৩১ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন বছর পঞ্চাশের বরুণবাবু। হাসপাতালের তরফে কমিশনে জানানো হয়, দৈনিক ৩৫ হাজার টাকার প্যাকেজে ভর্তি হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। দশ দিনে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বিল হলেও, তিরিশ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তবে বরুণবাবুর পরিবারের অভিযোগ, তাঁর ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন হয়নি। সাধারণ ওয়ার্ডেই চিকিৎসা হয়েছে। প্রথম তিন-চার দিন আইসোলেশন ওয়ার্ডেই ছিলেন তিনি। হাসপাতাল জানায়, তিনি পুরোটাই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছিলেন।
কমিশন জানায়, সন্দেহযুক্ত কোভিড রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পজ়িটিভ রিপোর্ট এসে গেলে তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে পাঠানোর কথা। সেখানে কোভিড জেনারেল ওয়ার্ডে দৈনিক ৩৫ হাজার টাকা খরচ লাগতে পারে না। চেয়ারপার্সন, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগী যখন ছুটি পাচ্ছেন, তখন পর্যন্ত তাঁর আইসিইউ প্রয়োজন হয়নি। তাই দৈনিক খরচ ৩৫ হাজার হতে পারে না। ১৫-২০ হাজার টাকা হতে পারে। তাই ১০ দিনে ২ লক্ষ টাকা খরচ ধরে বাকি এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা রোগীকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’
তপসিয়ার ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ২০ দিনের করোনা চিকিৎসায় ৭ লক্ষ টাকা বিল নেওয়ার অভিযোগ আনেন গৌরাঙ্গ সরকার নামের আর এক রোগী। কমিশন এ ক্ষেত্রেও দৈনিক ২০ হাজার টাকা হিসেবে ২০ দিনের বিলের কথা বলে তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিতে বলেছে। হাসপাতালের ম্যানেজার শাহিদ খান বলেন, ‘‘রোগীরা সব জেনেই ওই প্যাকেজে ভর্তি হয়েছিলেন।’’
আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের সভা ঘিরে উত্তপ্ত বীরভূম, চলল গুলি
গত ১২ অগস্ট অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ডিসান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সঙ্গীতা শিকারিয়া নামের এক রোগিণী। ১৪ অগস্ট তিনি মারা যান। তাঁর ছেলের অভিযোগ, ৩৫ ঘণ্টার চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। এ দিন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য করেছেন, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। কিন্তু বিল অনেক বেশি। ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’ ওই হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাগজপত্র না দেখে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’
দশ বছরের দু’টি বাচ্চার মৃত্যুতে মুকুন্দপুর আমরি ও দমদম আইএলএস হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, উদাসীনতা ও অন্যান্য অভিযোগ উঠেছে। এই দুটি মামলাতেই অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত হাসপাতালকে হলফনামা দিয়ে বক্তব্য জানাতে বলেছে কমিশন।
আরও পড়ুন: কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা, সুস্থতার হার বৃদ্ধি, প্রবণতায় আশার আলো