হঠাৎ জামিন পাওয়ার দিনই জেল থেকে উধাও বন্দি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বেআইনি মদ বিক্রির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রায় ১৫ দিন ধরে জেলে ছিলেন। হঠাৎ জামিন পাওয়ার দিনই জেল থেকে উধাও বন্দি। প্রথমে অভিযোগ নেয়নি থানাও। অবশেষে পিতার খোঁজ পেতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ পুত্র। পুরো ঘটনা শুনে বিস্মিত হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতিরা। আদালতের নির্দেশ, ওই ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৩০ ডিসেম্বর।
গত ৬ ডিসেম্বর বেআইনি ভাবে দেশি মদ বিক্রির অভিযোগে বাগনানের বাসিন্দা ৫০ বছরের রঞ্জিত ভৌমিককে মারধর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় উলুবেড়িয়ার মহকুমা আদালত। রঞ্জিতের পরিবারের তরফে জানা যায়, কিডনির সমস্যা থাকায় গত ১২ ডিসেম্বর তাঁকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। ২১ ডিসেম্বর উলুবেড়িয়া কোর্টে জামিন পান রঞ্জিত। সেই মতো পর দিন বাবাকে আনতে প্রেসিডেন্সি জেলে যান তাঁর ছেলে বুদ্ধদেব ভৌমিক। তাঁর অভিযোগ, এক ঘণ্টা বসতে বলে প্রায় চার ঘণ্টা তাঁকে বসিয়ে রাখেন জেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে তাঁরা জানান, আগে দিন রাত ৮টায় রঞ্জিতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও রঞ্জিত বাড়ি ফেরেননি।
এর পরেই বাবার খোঁজ পেতে হেস্টিংস থানায় এফআইআর দায়ের করতে যান ছেলে। কিন্তু এফআইআর না নিয়ে আলিপুর থানায় যেতে বলে হেস্টিংস থানা। ওই দিন সেখানেও এফআইআর দায়ের করতে পারেননি বুদ্ধদেব। পর দিন ফের তিনি আলিপুর থানায় যান। তখন তাঁর এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। এই পুরো ঘটনায় পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে সোমবার হাই কোর্টে দরবার করেন বুদ্ধদেব।
আদালতে মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী ও সূর্যনীল দাস প্রশ্ন তোলেন, কিডনি-সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ওই ব্যক্তিকে পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে একা ছেড়ে দেওয়া হল? তা ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী, জামিন পাওয়া বন্দিকে বিকেল ৫টার মধ্যে ছাড়তে হয়। ওই ব্যক্তিকে কেন রাত ৮টা নাগাদ ছাড়া হল, এই প্রশ্নও তোলেন মামলাকারীর আইনজীবী। এর পরেই বিচারপতি রবি কিসান কাপুর এবং বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এই ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে। কী ভাবে ওই বন্দি নিখোঁজ হলেন, তা জানাতে হবে।