রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে মঙ্গলবার বি আর অম্বেডকরের মূর্তিতে মাল্যদান করতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। অম্বেডকরের মূর্তিতে মাল্যদানের পরই সেই চেনা ঢঙে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেল রাজ্যপালকে। ‘ভেট পরবর্তী হিংসা’, রাজ্যের আইনকানুন-সহ একাধিক বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তোপ দেগেছেন তিনি। ধনখড় বলেন, “বাংলায় ভোটারদের স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্রে ভোটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় বিপদের মুখে গণতন্ত্র! ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ই সেই ঘটনার প্রমাণ।” এর পরই হুঁশয়িারি দেন, রাজ্যপালকে অন্ধকারে রেখে অধ্যক্ষ কিছু করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের সম্পর্কে রাজ্যপালের মন্তব্যের পরই পাল্টা সরব হন স্পিকার। তিনি বলেন, “অবাক হয়ে গেলাম, রাজ্যপাল বি আর অম্বেডকরের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার পর বিধানসভা সম্পর্কে অনেক সমালোচনা করলেন সাংবাদমাধ্যমের সামনে। এটা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ বলে মনে করি।”
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। রাজ্যে আইনের শাসন নেই। শাসকের আইন চলছে।” রাজ্যের অফিসারদের সংবিধান মেনে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন রাজ্যপাল। এর পরই তাঁর হুঁশিয়ারি, “রাজ্য সরকারি আধিকারিকরা সাংবিধানিক মর্যাদা ভুলে গিয়েছেন। রাজভবন কী করতে পারে তা জানা নেই সরকারি অফিসারদের। বিরোধীদের সঙ্গে শাসক দল খারাপ ব্যবহার করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজ্যপালের কথায় উঠে এসেছে বিএসএফ এবং বিল প্রসঙ্গও। তাঁর অভিযোগ, বিএসএফ নিয়ে তথ্য চাওয়ার পরেও তা দেওয়া হয়নি। রাজভবনের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখার যে অভিযোগ উঠেছে তা সরাসরি খারিজ করেছেন রাজ্যপাল ধনখড়। তিনি বলেন, “কোনও ফাইল রাজভবনে আটকে নেই। রাজ্যপাল সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। বিলে সই করা হয়নি বলেও মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।”
এই প্রসঙ্গে স্পিকার বিমান পাল্টা বলেন, “আমরা যা চিঠি লিখেছি প্রত্যেকটা বর্ণ সত্য। হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বিল পাশ করা হয়নি। অন্যান্য বিল সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও তথ্য আসেনি। বিধানসভা এমন একটা জায়গা যেখানে সমস্ত তথ্য আসা দরকার। কোনও তথ্য আসেনি, অথচ রাজ্যপাল কী ভাবে এ কথা বললেন জানি না।” রাজ্যপালের ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র প্রসঙ্গ টেনে বিমানের মন্তব্য, “বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। তার পরেও রাজ্যপাল কী ভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন জানি না।”
উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ধনখড়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া ২৫ জন উপাচার্যকে নিয়োগ করা হল। এ রকম নিয়োগ দেশের আর কোথাও হয় না বলেই অভিযোগ তাঁর। উপাচার্যদের ডাকার পরেও কেন তাঁরা আসেননি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাজ্যপালের কথায়, “শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ভিসি-দের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা না এসে ইউনিয়ন করছেন?”
মা ক্যান্টিনে কত টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়েও রাজ্যের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন বলে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল হিসেবে জানতে চেয়েছিলাম মা ক্যান্টিনের জন্য কত টাকা খরচ হয়েছে? উত্তর পাইনি। এখানে কি প্রশ্ন করার অধিকার নেই?” রাজ্যপালের আরও অভিযোগ, “আমি যে প্রশ্নই করি না কেন, রাজ্য তার কোনও উত্তর দেয় না।” ধনখড় আরও বলেন, “রাজ্যপালকে কী ভাবে উপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী?