ফাইল চিত্র।
সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ওই পদে বিরোধী শিবিরের সর্বসম্মত প্রার্থী যশবন্ত সিন্হা ইতিমধ্যেই প্রচারের জন্য গিয়েছেন রাজস্থান, তেলঙ্গনা, তামিলনাড়ু, গুজরাত-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্ত এখনও পশ্চিমবঙ্গে তাঁর পা পড়েনি। সূত্রের খবর, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে যশবন্তকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এসে আলাদা করে প্রচারের প্রয়োজনই নেই। কারণ, এই রাজ্যে সমস্ত বিরোধী ভোট যাতে তাঁর পক্ষে যায়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরং তিনি সেই সময়ে অন্যান্য রাজ্যে ঘুরে ভোট বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
অঙ্কের হিসেবে এই ভোটের ফল নিয়ে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের প্রত্যাশা ক্রমেই কমছে। তবু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রাজনৈতিক লড়াইয়ে দলের ভোট অটুট রাখতে সতর্ক তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই নিজেদের প্রস্তাবিত প্রার্থীর সমর্থনে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের ভোট নিশ্চিত করতে পুরো প্রক্রিয়ার নজরদারিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদের আলাদা করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৮ তারিখ বিধানসভায় তৃণমূলের রাজ্যসভা এবং লোকসভার সমস্ত সাংসদ ও বিধায়কেরা একত্রে ভোট দেবেন। একমাত্র দলের নতুন সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা ওই দিন দিল্লিতে উপস্থিত থাকবেন শপথ গ্রহণের জন্য। তিনি সংসদেই ভোট দেবেন। খাতায়-কলমে এখনও বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিংহের ভোটও পাবে তৃণমূল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের প্রস্তুতি গোড়া থেকেই ঢিলেঢালা। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের তৎকালীন সহ-সভাপতি যশবন্ত সিন্হাকে প্রার্থী করে বিরোধীরা এক জায়গায় এলেও, নির্বাচনী লড়াইয়ে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই কমছে। এই অবস্থায় নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে দলের ভোট রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল। বিশেষ করে, বিরোধী শিবিরের হয়ে তৃণমূল প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দলের ‘দায়িত্ব’ অনেকটাই বাড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনও ভাবে দলের ভোট যাতে কম না হয়, তা নিশ্চিত করতেই দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্ব।
জনজাতি প্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদীকে আলাদা ভাবে প্রচারে এনেছে বিজেপি। সেই প্রেক্ষাপটে বিজেপির তরফে বিরোধী শিবিরের ভোট ভাঙার যে কৌশলী আহ্বান সামনে রাখা হয়েছে, তৃণমূলের নজরে রয়েছে তা-ও। তবে দলের ভোট অন্য দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের ভোট ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, মমতার আমলেই রাজ্যে জনজাতিদের জল-জঙ্গলের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। ফলে জনজাতিরা মমতাকেই তাঁদের নিরাপদ আশ্রয় মনে করেন।’’
রাজ্যের সাংসদ ও বিধায়ক সংখ্যা মিলিয়ে তৃণমূলের এ বারের ভোটার ২৫৪। তা অটুট রাখতে জেলাওয়াড়ি বিধায়কদের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের নেতা-মন্ত্রীদের। ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটকদের মতো মন্ত্রীরা এই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। একই ভাবে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায় রয়েছেন সাংসদদের ভোট-পর্বের দায়িত্বে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাংসদ ও বিধায়কেরা গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন। সেখানে দুই প্রার্থীর নাম থাকবে। যাঁকে ভোট, তাঁর নামের পাশে 1 (ওয়ান) লিখতে হবে। তবে নিজের পেনে নয়, তা করতে হবে প্রিসাইডিং অফিসারের কলমে। কোনও ভাবে গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হলে, ভোট বাতিল হয়ে যাবে। তাই সেই গোপনীয়তা রক্ষার বিশদ তথ্যাবলি-সহ ভোটদান সংক্রান্ত সব নিয়ম পাঠানো হয়েছে সাংসদ ও বিধায়কদের কাছে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের করণীয় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে সেখানে।
এ দিকে, সর্বভারতীয় স্তরে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে শুধু জেএমএম-ই নয়, উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে থাকা শিবসেনার সাংসদেরাও সরকার পক্ষের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকেই ভোট দেবেন। এই লড়াইয়ে জয়ের কার্যত সম্ভাবনাই থাকছে না যশবন্তের। কিন্তু লড়াইকে প্রতীকীস্তরে বাঁচিয়ে রাখতে বিরোধী পক্ষের এক নেতা বুধবার জানাচ্ছেন, “শতকরা হিসাবে আমাদের ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়া নিশ্চিত। বিষয়টি পরবর্তী বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”