মঙ্গলবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ছবি: পিটিআই।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মঞ্চ থেকে রবীন্দ্রভাবনার গুরুত্বের কথাই মনে করিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে গড়া শিক্ষালয়ের প্রাঙ্গণে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রকৃতিই উপযুক্ত।
দু’দিনের রাজ্য সফরের অঙ্গ হিসাবে মঙ্গলবার বিশ্বভারতীতে এসেছেন রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ শান্তিনিকেতনে পৌঁছন তিনি। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয় দুপুর ৩টে নাগাদ। সেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে তিনি রবীন্দ্র ভবন ঘুরে দেখেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ১২টা ৪০ মিনিটে শান্তিনিকেতনের বিনয় ভবনের কুমিরডাঙা মাঠে রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার অবতরণ করে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। দুপুরে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান বোলপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি বস্ত্রমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। এর পর দুপুর ১টা নাগাদ সড়কপথে বিশ্বভারতীর রথীন্দ্র অতিথিগৃহে পৌঁছন রাষ্ট্রপতি। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। রাষ্ট্রপতির জন্য ভাত, রুটির সঙ্গে মুগের ডাল, পোস্তর বড়া, সুস্বাদু পনিরের তরকারি ছাড়াও একাধিক নিরামিষ পদে সাজানো ছিল মধ্যাহ্নভোজ।
দুপুরের আহারের পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সড়কপথে শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে নিয়ে যাওয়া হয়। উত্তরায়ণে রয়েছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। সেখানে গিয়ে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত বাড়ি উদয়নে তাঁর চেয়ারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি। এর পর ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র খুঁটিয়ে দেখেন তিনি। উদয়ন, পুনশ্চ, কোণার্ক, শ্যামলী— যে সমস্ত বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ থাকতেন, তা-ও ঘুরে দেখেন রাষ্ট্রপতি। এর পর সড়কপথে বিশ্বভারতীর কলা ও সঙ্গীতভবনেও যান। কলাভবনের শিল্পীদের হাতের কাজ দেখে দৃশ্যতই বেশ খুশি রাষ্ট্রপতি। সেখান থেকে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাতিমতলায় গিয়ে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ বিশ্বভারতী ২০২২ বর্ষের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন রাষ্ট্রপতি। শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে স্থায়ী জহর বেদিতেই প্রথামাফিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। মঙ্গলবার সেখানকার মঞ্চে উঠে বিশ্বভারতীর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি। তাঁর ভাষণে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ। বিশ্বভারতীর আশ্রম সঙ্গীত ‘আমাদের শান্তিনিকেতন আমাদের সব হতে আপন’-এর উল্লেখ করে এর অন্তর্নিহিত একতা ও মানবিকতার কথা মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আরও বলেন, ‘‘গুরুদেব মনে করতেন, প্রকৃতিই হল শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম।’’ ভাষণে রবীন্দ্রনাথের মুক্তচিন্তার কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।