কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
‘যথেষ্ট’ প্রস্তুতি নিয়েও আমপানের সময় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। তাই বঙ্গোপসাগরের আর এক ঘূর্ণিঝড় সিত্রং নিয়ে আগাম সতর্ক হতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। এ ক্ষেত্রে আমপানের সময়কার ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে চায় পুরসভা। শনিবার এমনই জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
আমপানের সময় শহরের রাস্তায় বড় গাছ পড়ে গিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল। শহরের অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোনও কোনও জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতেই দু-তিন দিন সময় লেগে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিন কুঠারের বন্দোবস্ত করেছে পুরসভা। গাছ কাটায় পারদর্শী কর্মীদের মোতায়েন রাখার কথা বলা হয়েছে। শনিবার বেলায় মেয়র এবং পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার সব পুর-দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বর্জ্য এবং নিকাশি ব্যবস্থাপনা দফতরকে ম্যানহোলগুলি পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ম্যানহোলগুলির মুখে প্লাস্টিক বা অন্য কোনও আবর্জনা জমে থাকছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। শহরের সবক’টি পাম্পিং স্টেশনকে চালু রাখার নির্দেশও দিয়েছেন মেয়র। তিনি জানান, সোম এবং মঙ্গলবারের সম্ভাব্য দুর্যোগের আগেই পাম্পগুলিকে চালিয়ে সেগুলির কার্যকারিতা দেখে নেওয়া হবে। পুরনো বাড়ি ভেঙে বহু বার বিপর্যয় ঘটেছে শহরে। সেই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুরসভা। প্রয়োজনে তাঁদের বুঝিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বিদ্যৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা এড়াতে শহরে কোথাও খোলা বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে কি না তা-ও দু’দিনের মধ্যে খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।
শনিবার সকালে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আরও শক্তি বাড়িয়েছে আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্তের ফলে সৃষ্ট নিম্নচাপ। বর্তমানে এই নিম্নচাপ উত্তর আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করছে। রবিবার এই নিম্নচাপের পূর্ব-মধ্য ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের দিকে এগিয়ে এসে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা। এর পর সোমবার অর্থাৎ কালীপুজোর দিন সেই গভীর নিম্নচাপ পশ্চিম, মধ্য ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলেও আবহবিদরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকিং শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসকরা জেলার সব বিডিওর সঙ্গে এই বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।