পার্থপ্রতিম রায় ও উদয়ন গুহ। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতে কেউ সন্ত্রাসের রাজনীতি করার চেষ্টা করলে তার দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের গড় ভেটাগুড়িতে দাঁড়িয়ে এমনই নিদান দিলেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং কোচবিহার জেলার তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। দুই তৃণমূল নেতার এ হেন মন্তব্য নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছে বিজেপি এবং সিপিএম।
শুক্রবার দিনহাটার ভেটাগুড়িতে দলের তরফে আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন পার্থ এবং উদয়ন দু’জনেই। সেখানে পার্থ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে এই ভেটাগুড়ির মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি সন্ত্রাস তৈরি করার চেষ্টা করে, বোমা-বন্দুকের রাজনীতি করার চেষ্টা করে তার দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। সে যেই হোক না কেন। কোনও ছাড় দেওয়ার গল্প নেই। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের উপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালে লোকসভা পুনরুদ্ধার করতে চায় তৃণমূল। কারণ, যে প্রবঞ্চনা, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মানুষের সঙ্গে তাকে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা ভেটাগুড়ির মাটিতে আমাদের সকলকে গ্রহণ করতে হবে।’’
বক্তৃতার সময় পার্থর সুর শোনা যায় উদয়নের গলাতেও। দিনহাটার বিধায়ক বলেন, ‘‘পার্থ বলছিল, ‘‘যারা আমাদের বিরুদ্ধে মস্তানির রাজনীতি করতে আসবে, লাঠি, বোমা, বন্দুকের রাজনীতি করতে চাইবে, তাদের দাঁত ফেলে দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “আমি একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বলি, এখন দাঁতের ডাক্তাররা সহজে দাঁত ফেলতে চান না। তাঁরা রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করেন। এই তো আমার দাঁতে ব্যথা হয়েছিল, ডাক্তারবাবু বললেন, ‘আপনার দাঁত তুলব না।’ রুট ক্যানেল করে দিলেন। দাঁত না তুলেই চিকিৎসা হল। পার্থর কথার পুনরাবৃত্তি করে আমি বলি, যারা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের কর্মীদের আঘাত করে দাঁত তুলতে চাইবে, তাদের আমরা রুট ক্যানেল করব না। তাদের দাঁতটা সাঁড়াশি দিয়ে গোড়া থেকে তুলে দেব। সেই জন্য আমাদের সাঁড়াশিও রেডি থাকবে।’’
পার্থ এবং উদয়নের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি এবং সিপিএম। বিজেপির কোচবিহার জেলার সভাপতি সুকুমার রায়ের পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কোচবিহার জেলার সমস্ত জায়গায় ফোন করে, সভা করে ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছেন যেন, বিরোধী দল না দাঁড়াতে পারে। সে জন্য বিজেপি কর্মীরা চুপচাপ বসে নেই। সমস্ত দিকে তৈরি। তারা যদি এ বার সন্ত্রাস তৈরি করতে চায় তার ফল ভয়ানক হবে। বার বার ওদের নেতা-মন্ত্রীরা কেউ পা ভাঙা, কেউ দাঁত ভাঙার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। অশান্তি তৈরি করে যাচ্ছে কোচবিহারে। কিন্তু যদি ভাবে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো জোর করে পঞ্চায়েত দখল করবে, তা হলে এ বার তা হতে দেবে না বিজেপির কর্মীরা।’’
সিপিএমের কোচবিহার জেলার সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ‘‘বামপন্থীরা বোমা-গুলির রাজনীতি করে না। বামপন্থীদের অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। এটা উদয়ন গুহ, পার্থরা করে অভ্যস্ত। ওঁরা গণতন্ত্র মানেন না। সমাজবিরোধীদের ব্যবহার করেন। উদয়ন কোচবিহারের দ্বিতীয় অনুব্রত। ওঁরা জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন। ওঁরা কী বললেন না বললেন তাতে বামপন্থীদের কিছু যায়-আসে না।’’