Prabha Khaitan Foundation

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনে লেখক রামকুমার মুখোপাধ‌্যায় ও স্বনামধন্যা লেখিকা কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্তকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হল সাহিত‌্য সভা

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন, আখর কলকাতা ও পূর্ব-পশ্চিম নাট‌্যদলের উদ‌্যোগে এক সাহিত‌্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন আলোচনায় অতিথি ছিলেন বিখ‌্যাত লেখক রামকুমার মুখোপাধ‌্যায়। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন‌্য লেখিকা কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৫৩
Share:

লেখক রামকুমার মুখোপাধ‌্যায় ও স্বনামধন্যা লেখিকা কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত

গত ৯ অক্টোবর কলকাতার কনক্লেভ হোটেল-এ প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন, আখর কলকাতা ও পূর্ব-পশ্চিম নাট‌্যদলের উদ‌্যোগে এক সাহিত‌্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন আলোচনায় অতিথি ছিলেন বিখ‌্যাত লেখক রামকুমার মুখোপাধ‌্যায়। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন‌্য লেখিকা কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত। শারদীয়া উৎসবের প্রাক্কালে মনোগ্রাহী, সরস আলোচনায় ঋব্ধ হন শ্রোতারা।

Advertisement

আলোচনার সূচনা হয় শারদীয়া ও শারদ সাহিত‌্য নিয়ে। সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রামকুমার মুখোপাধ‌্যায় বলেন, “আমাদের ছোটবেলায় পুজো অনেক পরে শুরু হত। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর মন্ত্রপাঠ, পঙ্কজ কুমার মল্লিকের তৈরি গানের ডালি দিয়ে হত উৎসবের সূচনা। এর সঙ্গে পত্র-পত্রিকার ব‌্যাপার তো ছিলই, একটা নতুন কিছু, নতুন লেখা পাওয়ার আশা থাকত এই সময়। লেখকদের একেবারে ঝকঝকে আনকোরা নতুন লেখা, লেখকদের ব‌্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, তাঁদের নিজেদের মতো করে চারপাশকে দেখা, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, সবকিছুরই প্রতিফলন ছিল এই শারদ সাহিত‌্য। ১৯৭৯-৮০ সালে আমার যখন বয়স ২৩ কী ২৪ তখন প্রথম গল্প ছাপা হয় একটি শারদীয় সংখ‌্যাতে। ওই সংখ‌্যাতে অমিয়ভূষণ মজুমদার-এর প্রথম উপন‌্যাস বের হয়। এটা আমার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি।’’

রামকুমার মুখোপাধ‌্যায়

জীবনের নানা ছোট-বড় টুকরো ঘটনার কোলাজ ফুটে ওঠে সমগ্র আলোচনায়। জীবনের প্রথম ছোট গল্প যা কলেজে ছাত্রাবস্থায় মাত্র দু’ঘণ্টায় লেখা হোক, বা পত্রিকার ফর্মা ভরাতে গল্প লেখা এমন নানা ঘটনার টুকরোতে এক মনোরম আলোচনা হয়ে ওঠে। এরপর তাঁর লেখা প্রসঙ্গে নানা কথা উঠে আসে আলোচনায়। তাঁর ভাষা প্রয়োগ, বিন‌্যাস, চরিত্রায়ণ বা উপন‌্যাস ও গল্পের বিষয়বস্তু সব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তাঁর বাঁকুড়া জেলায় জীবনযাপন কেমন ভাবে তাঁর প্রায় প্রত‌্যেকটি লেখায় প্রভাব ফেলেছে তা নিয়েও চলে বিস্তারিত কথোপকথন। জীবনে ঘটে চলা নানা ঘটনা, অভিজ্ঞতা, মানুষজন কেমন ভাবে তাঁর লেখায় প্রভাব ফেলেছে তা নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। নানা ভাষার সাহিত‌্য যেমন তিনি পড়েছেন এবং প্রভাবিত হয়েছেন আবার তেমনই তাঁর পরিচিত পাশের বাড়ি বন্ধু দিবাকরের পিসি যিনি তাঁকে চন্ডিমণ্ডপে বসে প্রচুর গল্প শোনাতেন কাঁথা বুনতে বুনতে তিনিও প্রভাবিত করেছেন তাঁর লেখা। তাঁর হাতের সেই সূঁচ তাঁর কথার তালে চলত। আরেকজন হলেন ফেতীরানি দাসি। ইনি ছিলেন নিরক্ষর এবং আংশিক দৃষ্টিহীন। এই ফেতেরানি দাসি যখন রামায়ণ গান গাইতেন তখন তিনি দু’-আড়াই ঘণ্টা দর্শকদের মোহিত করে রাখতেন। ‘আমি যখনই গল্প বা উপন‌্যাস লিখেছি তখন এই দুই কথক আর তাঁদের বিচরণের কথা স্মরণ করেছি।’— রামকুমার মুখোপাধ‌্যায়। সব মিলিয়ে এক মনোরম আলোচনা সভা উপহার পেলেন শ্রোতারা।

Advertisement

বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ‌্যোপাধ‌্যায় বলেন, “আজকের এই সাহিত‌্য আলোচনা সভা খুবই উপভোগ‌্য ছিল। সাধারণত আমরা যেরকম পেশাগত জীবন কাটাই তাতে এমন কোয়ালিটি টাইম দিতে পারি না। সৌমিত্রদার আমন্ত্রণে আমার এখানে আসা। রামকুমারবাবুর লেখা আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে বড় হচ্ছি। কৃষ্ণ শর্বরী আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। আমি ওর বড় ভক্ত। ও নিজেও খুব সুন্দর লেখে। আলোচনাটা খুব সুন্দর হয়েছে। এত সুন্দরভাবে কথোপকথন চলছিল যেন মনে হচ্ছিল সব যেন দেখতে পাচ্ছি। খুব ভাল লেগেছে।’’

প্রশান্তকুমার বসু

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক দর্শক প্রশান্তকুমার বসু জানিয়েছেন, “আজকের এই আলোচনা সভা অত‌্যন্ত মনোজ্ঞ ছিল। অনেকেই বলে আমি সাহিত‌্য বুঝি না, আমি মনে করি আমি গণিতের মানুষ হয়েও সাহিত‌্য বোঝার চেষ্টা করি। আমি অনেক সাহিত‌্য সভায় যাই। কারণ সাহিত‌্যের মধ‌্যেও গণিত আছে আবার গণিতের মধ‌্যেও সাহিত‌্য আছে। উনি যেমন বলছিলেন একটা বড় গ্রাম তার মধ‌্যে ছোট ছোট গ্রাম। জীবনও অনেকটা তাই। একটা জীবন তার মধ‌্যে ছোট ছোট নানা ঘটনার প্রভাব। গণিতের পাশাপাশি আমি ছবিও আঁকি। রামকুমারবাবু কথা বলে চলেছিলেন আর আমি আমার ছোট নোটবইতে আঁকছিলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement