—ফাইল চিত্র ।
ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। সঙ্গে দোসর কালবৈশাখীও। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, একটি ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে পূর্ব বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৫ থেকে ৫.৮ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে। হরিয়ানা থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পূর্ব বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। যা রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৫ কিলোমিটার উপরে। একই সঙ্গে, আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩.১ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে, বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বলয় তৈরি হতে পারে বলে আলিপুরের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে । পরে সেটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। আরও শক্তি বৃদ্ধি করে সেই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতিও সাগরে তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। যদিও ঘূর্ণিঝড় আসবেই, তেমনটা নিশ্চিত করে জানায়নি হাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নিম্নচাপ তৈরি হলে শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। শনিবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে। এই তিন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার। সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আগামী শুক্রবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দফতর।
আবহবিদেরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সমুদ্রের ঢেউয়ের গতিবিধির উপরে নজর রাখছে হাওয়া অফিস। তাঁদের একাংশের দাবি, সমুদ্রপৃষ্ঠের যে তাপমাত্রা, তা-ও ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূলে রয়েছে। তবে বর্ষা ঘূর্ণিঝড়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পৌঁছেছে, যার প্রভাবে দেশে বর্ষা হয়। তবে মৌসুমি বায়ু ঘূর্ণিঝড় তৈরির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও হাওয়া অফিস জানিয়েছে।
একই সঙ্গে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ঝড়বৃষ্টি বেশি হতে পারে। বৃষ্টির সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। বৃষ্টি চলবে বুধবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কমতে পারে দক্ষিণে। এর পর শুক্রবার থেকে আবারও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বলয়ের জেরে ভারী বৃষ্টিতে ভিজতে পারে রাজ্য। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরের সব জেলাতেও মঙ্গলবার এবং বুধবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর।
এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে আগেভাগেই পদক্ষেপ করেছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন ভবনে বিদ্যুৎ দফতর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং সিইএসসির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎসচিব শান্তনু বসু। সকল আধিকারিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। ঝড়ের ফলে কোথাও বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর, অর্থাৎ উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দফতর (ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট)। ২০২০ সালে মৌসম ভবনের তরফে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা দেওয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তা হলে তালিকা অনুযায়ী সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘রেমাল’। তবে এখনও আবহাওয়া দফতরের তরফে এই নাম ঘোষণা করা হয়নি। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তৈরি হলে, তবেই ঘোষণা হবে নাম।