Sabar girl

পড়াশোনা করতে আর্তি শবরকন্যার

কিশোরী বলে, ‘‘ঠাকুমা ও পিসি খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিলেও আমাদের খাতা-কলম কেনার ক্ষমতা ওঁদের নেই। পড়াশোনা শিখে দিদিমণি হয়ে বাড়ির দুঃখ দূর করতে চাই। কিন্তু কেউ সাহায্য না করলে পড়া বন্ধ করতে হবে।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৬
Share:

ভাই-বোনের পড়া দেখাচ্ছে দীপালি শবর। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়

বাবা-মা মারা যাওয়ায় সংসার চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন বার্ধক্যভাতা পাওয়া ঠাকুমা আর দিনমজুর পিসি। ভাত-কাপড়ের জোগাড় হলেও তিন ভাই-বোনের পড়ার খরচ চালানো ‘বাড়তি চাপ’ তাঁদের উপরে। সে কথা বুঝে পড়াশোনা চালাতে সাহায্য চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছে বছর তেরোর মেয়ে। বাঁকুড়ার রানিবাঁধের ঘোলকুঁড়ি গ্রামের দীপালি শবর। এলাকার এক ‘দাদা’র মোবাইলের সাহায্যে কিশোরীর আবেদন, ‘একটা ব্যবস্থা করে দিন পড়াশোনার জন্য’।

Advertisement

দীপালির বাবা শ্যামল শবর ছৌ-শিল্পী। নাচের আসরের রোজগার আর রাজ্য সরকারের শিল্পী ভাতার টাকায় সংসার চলত। কিন্তু বছর তিনেক ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন বছর চল্লিশের শ্যামলবাবু। গত বছর তাঁর স্ত্রী পস্তু শবর হৃদরোগে মারা যান। সংসারের দায়িত্ব নেন শ্যামলবাবুর মা সরলা শবর ও বোন সাগি শবর। বুধবার শ্যামলবাবু মারা যেতেই চোখে অন্ধকার দেখেন তাঁরা।

সরলাদেবীর কথায়, ‘‘শিল্পী ভাতা বন্ধ হবে। বার্ধক্যভাতার সামান্য টাকা আর মেয়ের দিনমজুরির রোজগারে কী ভাবে এখন সংসার টানব? আমরা না থাকলে তিনটে বাচ্চার যে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’

Advertisement

সে চিন্তা ঢোকে ধানাড়া হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী দীপালির মাথাতেও। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তার বোন বাসন্তী, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভাই জয়। এ দিন কিশোরী বলে, ‘‘ঠাকুমা ও পিসি খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিলেও আমাদের খাতা-কলম কেনার ক্ষমতা ওঁদের নেই। পড়াশোনা শিখে দিদিমণি হয়ে বাড়ির দুঃখ দূর করতে চাই। কিন্তু কেউ সাহায্য না করলে পড়া বন্ধ করতে হবে।’’

‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র সহায়তায় ঘোলকুঁড়ি ও সারেশডাঙা গ্রামের শবর ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পড়া দেখিয়ে দেন স্থানীয় যুবক তপন শবর। দীপালি তাঁকে সমস্যার কথা জানায়। তপন বলেন, ‘‘শবরদের সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়া-নেওয়ার জন্য সমিতি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। সেখানে শবরেরা ছাড়াও, সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। তাই দীপালির আবেদন ওই গ্রুপে পোস্ট করি।’’

দীপালির স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎকুমার পতি বলেন, ‘‘স্কুলে ৪৫০ পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র চার জন শবর। দীপালি পড়াশোনায় ভাল। ওর পড়া যাতে বন্ধ না হয়, স্কুলের তরফে চেষ্টা করব।’’ শবর সমিতির সম্পাদক জলধর শবরের আশ্বাস, ‘‘লেখাপড়ার পাশাপাশি, ওরা যাতে বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণ পেয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে, সে দিকেও খেয়াল রাখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement