চিন্তা: এনআরসি তালিকায় নাম নেই পরিজনের। উদ্বেগে কোচবিহারের একটি পরিবার। ফোনে কথা চলছে তা নিয়েই। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা যেন প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কেউ ওই তালিকার বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। কেউ আবার এমন তালিকার স্বপক্ষে সওয়াল করছেন। শনিবার ওই তালিকা প্রকাশের পরে এমনই চাপানউতোর শুরু হয়েছে অসম লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের জেলা কোচবিহারে। প্রত্যেকেই ওই তালিকাকে সামনে রেখে নিজেদের পায়ের তলার মাটি আরেকটু শক্ত করার পথে হাঁটছেন।
বিজেপি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এনআরসি’র পক্ষে। কোচবিহার তথা পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি’র দাবিতেই পথে নামবেন তাঁরা। বিজেপি’র কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের প্রচার বিভ্রান্তিকর। মানুষ সেগুলো আর গ্রহণ করছেন না। আমরা এনআরসি’র পক্ষে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতেই হবে। তা ছাড়া কাউকেই তো অসমে বিদেশি ঘোষণা করা হয়নি। আসলে তৃণমূল ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে বিভ্রান্তিকর প্রচার করছে।”
তৃণমূল ইতিমধ্যেই অসমের নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ দেওয়াকে সামনে রেখে প্রচার শুরু করেছে। এমনকি তারাও স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে, প্রত্যেক বাঙালিকেই আশ্রয় দেওয়া হবে। রবিবার মারুগঞ্জে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি, মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “বিজেপি’র সবকা সাথ সবকা বিকাশ এখন মানুষ বুঝতে পাচ্ছেন। আসলে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নামিয়ে আনাই এদের কাজ। লক্ষ লক্ষ বাঙালির নাম নেই ওই তালিকায়। আমরা সবার পাশে থাকব।” তিনি অভিযোগ করেন, কোচবিহারে এমন বহু পরিবার রয়েছেন, যাঁদের মেয়ের বিয়ের হয়েছে অসমে। তাঁরা সমস্ত নথি, এমনকি রাজ আমলের জমির কাগজ জমা দেওয়ার পরেও তাঁদের নাম ওই তালিকায় নেই। আজ, সোমবার থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণমঞ্চ সভা করবে কোচবিহারে। জয়হিন্দ বাহিনীর কোচবিহারের নেতা প্রবাল গোস্বামী জানান, তাদের আমন্ত্রণে ওই সংগঠন কোচবিহার শহর, দিনহাটা-সহ একাধিক জায়গায় সভা করবে।
বসে নেই বামেরাও। দিন কয়েক আগেই কোচবিহারের জেলাশাসকের দফতরে সামনে পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির তরফ থেকে সভা করা হয়। পরে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষে অভিযোগ করা হয়, কোচবিহারের পঞ্চাশ হাজারের বেশি পরিবারের মেয়ে বিবাহসূত্রে অসমের বাসিন্দা। তাদের অনেকেরই নাম নেই তালিকায়। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, “আমরা কোনওভাবেই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি লাগু হতে দেব না। আমাদের সর্বাত্মক আন্দোলন চলবে। সারা দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে একটা আঘাত হানার চেষ্টা করছে বিজেপি।”