পুলিশ এবং সিবিআইয়ের ভূমিকাকে তুলোধোনা করছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। — প্রতীকী চিত্র।
সুবিচার চেয়ে ফের আদালতের কাছে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের আর্জি এবং চিকিৎসকদের প্রতিবাদের পাশাপাশি আর জি কর-কাণ্ডে ফের দানা বাঁধছে রাজনৈতিক আন্দোলনও। সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) রিপোর্টকে হাতিয়ার করে নতুন করে সরব হয়েছে বিরোধীরা। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য কটাক্ষ করছে, পুলিশ, সিবিআই বা সুপ্রিম কারও উপরে ভরসা না-রেখে বিরোধীরা ‘মনগড়া গল্প’ চাইছে!
আর জি করে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের দাবির পাশে দাঁড়িয়েই পুলিশ এবং সিবিআইয়ের ভূমিকাকে তুলোধোনা করছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেছেন, ‘‘সংগঠিত ষড়যন্ত্রের শিকার আমার চিকিৎসক বোনটি। আমি পরিবারের সঙ্গে আছি। তাঁরা আমাকে কিংবা আমার দলকে কিছু বললেও আমি পাল্টা তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। কারণ, আমরা আন্দোলন করেছি, কালো ব্যাজ পরেছি, মোমবাতি মিছিল করেছি। কিন্তু সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ওই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।’’ বিধানসভার বাইরে এ দিন এই সূত্রে ফের তাঁর অভিযোগ, ‘‘সন্দীপ ঘোষ, সুশান্ত রায়, অভিক দে, অভিজিৎ মণ্ডল, বিনীত গোয়েলেরা পোশাক থেকে শুরু করে ঘটনা ঘটার জায়গা, সব বদলে দিয়েছে! পাঁচ দিন ধরে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়েছে। যেটুকু বাকি ছিল, ১৪ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অতীন ঘোষের নেতৃত্বে তৃণমূলের বাহিনী জুনিয়র চিকিৎসকদের হোস্টেলে ঢুকিয়ে সব ভাঙচুর করে দিয়েছে।’’ শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘কেউ ছাড়া পাবে না। সবার শাস্তি হবে।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অবান্তর, আজগুবি গল্প! ঘটনার পরে প্রথম দিনেই কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্তকে। সিবিআই তার নামেই চার্জশিট দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট মামলা শুনেছে, সেখানে সব পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। এখন এই সব কথার মানে কী? পুলিশ, সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট কারও উপরেই আস্থা নেই! রাজনীতির স্বার্থে ওঁরা যেটা চান, সেটাই সবাইকে বলতে হবে!’’
চিকিৎসকদের ডাকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ‘দ্রোহে’র জমায়েতে এ দিন গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ফরেন্সিকের রিপোর্টে বোঝা যাচ্ছে, অপরাধের অকুস্থলে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। রাজ্য সরকারকে কার্যত রক্ষা করছে কেন্দ্রীয় সরকার, এটা শুধু সেটিং নয়, পুরোটাই দু’টো দলের রাজনীতির ফিটিং! বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’পক্ষ পরস্পরের লাইফ জ্যাকেট!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের মন্তব্য, ‘‘সব কিছুই সেটিং হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ, সিবিআই, ইডি কারও উপরে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যাবে কার কাছে, ইন্টারপোলের কাছে?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘পরিবার বলছিল, আমরা বলছিলাম, সিএফএসএল রিপোর্টে বোঝা গেল, খুন হয়েছে অন্য কোথাও। ক্রাইম সিন বদলে দেওয়া হয়েছে। এই রিপোর্টে স্পষ্ট, রাজ্য সরকার প্রতারণা করেছে। অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সিবিআই-ও কিছু করেনি। কিন্তু মানুষ বিচার আদায় করবেনই।’’ আর জি কর-কাণ্ডে ন্যায়-বিচারের দাবিতে বেশ কিছু কর্মসূচিও নিচ্ছে বামেরা।