আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মতো দলগুলিকে পাশে পেতে রীতিমতো ‘প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়ে গেল ডান-বাম দুই শিবিরেই। আগামী অক্টোবর মাসেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা। গত রবিবারই শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে বিকাশ পরিষদের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেব। তৃণমূলের তরফে মোর্চার সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর মধ্যেই সোমবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকের পরেই পরিষদ এবং মোর্চাকে একযোগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করার প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বামেরা। শুধু তাই নয়, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন বা এসইউসিআই-র মতো দলগুলিকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
ইতিমধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই মোর্চা এবং পরিষদের স্থানীয় নেতাদের কাছে দুই তরফেই টেলিফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই শাসক এবং প্রধান বিরোধী দল ফ্রন্টের তরফে ফোন বা যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। দুই তরফের শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও একযোগে লড়াইয়ের ‘যৌক্তিকতা’ বোঝানো শুরু হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
বামেদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরের চেষ্টার পরে চা বাগান আন্দোলনকে ঘিরে তৃণমূলকে ছাড়া সমস্ত দলের ২৩টি শ্রমিক সংগঠনের একটি যৌথমঞ্চ গড়া সম্ভব হয়েছে। মঞ্চের একসঙ্গে ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে চা বাগিচায় ন্যূনতম মজুরি চুক্তি মেনে নিয়ে সরকার সময় ধার্য করে কমিটি গড়েছে। মঞ্চের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতেই মধ্যবর্তী এই সময়ের জন্য মজুরি চুক্তিও করেছে। তাই মঞ্চের সদস্যরা একযোগে ভোটে লড়লে, গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নের কাজে অবশ্যই তরাণ্বিত হবে।
রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলকে ঠেকাতে স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। সবাইকে নিয়ে আমরা ভোটে লড়তে ইচ্ছুক।’’ আর জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘আমরা চাই মঞ্চের মতো সবাই মিলে আসন বণ্টন করে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে। বিভিন্ন বামপন্থী দল-সহ মোর্চা, পরিষদকেও আমরা লিখিত প্রস্তাব দিচ্ছি। তবে কংগ্রেসের আইএনটিইউসি’কে তা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, কংগ্রেস এই সমঝোতায় রাজি হবে না বলেই আমরা জানি।’’
ফ্রন্ট সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ এলাকায় ১৬ টির মতো চা বাগান রয়েছে। বাগানগুলিতে সিপিএম-সহ বাম শরিকদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংগঠন থাকলেও বিকাশ পরিষদের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় ভাল সংগঠন রয়েছে। ইতিমধ্যে পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠন প্রোগেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ‘শক্তি’ বাগানকে ঘিরে বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে এসেছে। তেমনই, তরাই-এর নেপালি অধ্যুষিত এলাকায় মোর্চার সংগঠনও রয়েছে। এই দুইকে মাথায় রেখেই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুটি দলকে পাশে পেতে চাইছে তৃণমূল এবং সিপিএম। এ ছাড়াও ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ির মতো এলাকায় সিপিআই (এমএল) লিবারেশন বা এসইউসিআই-র কিছু সংগঠন রয়েছে। তা-ও মাথায় রেখেছেন ফ্রন্ট নেতৃত্ব।
বামফ্রন্টের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বামেদের অবস্থা গোটা রাজ্যে এখন তেমন শক্তিশালী হয়। বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের ধস নেমেছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে চা বাগিচা আন্দোলনের কায়দায় বাকি দলগুলিকে পাশে পেতে পারলে তৃণমূলকে ভোটে যথেষ্টই টক্কর দেওয়া সম্ভব হবে।
যদিও পরিষদ বা মোর্চা নেতারা এখনই ডান বা বাম দুই তরফের প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি ভাবে কিছুই বলছেন না। যেমন, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকে বলেন, ‘‘আমরা নানা প্রস্তাব পাচ্ছি। তবে এখনই কিছু বলছি না। আমাদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি রয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’ আর মোর্চার তরাই-ডুয়ার্সের আহ্বায়ক শঙ্কর অধিকারী বলেছেন, ‘‘আমাদের দার্জিলিঙে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবে। তার পরেই আমরা রণনীতি ঘোষণা করব।’’
এদিকে, মঞ্চ গড়ে লড়াই করতে গেলে বাম শরিকদের নিজেদের আসনেও টানাটানি হবে বলে বাম নেতারা ধরে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে সব শরিকই সার্বিক ঐক্যের স্বার্থে কিছু কিছু আসন প্রয়োজনে ছাড়বেন বলেও ফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে। ফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশবাবু জানান, সকলে মিলে একসঙ্গে চলতে গেলে কিছুটা ত্যাগ করতেই হবে। এ নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। ব্লক স্তরে আলোচনা করে সব মেটানো হবে।
উল্লেখ্য, অক্টোবর মাসে ৯টি মহকুমা পরিষদ, ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে শিলিগুড়িতে ভোট হওয়ার কথা।