Cyclone Remal

রাতভর তদারকিতে মুখ্যমন্ত্রী, ছুটলেন প্রতীক, নিরাপদেরাও

লন্ডভন্ড বাংলায় সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার বার্তা দিলেন। সেই সঙ্গে নানা দলের প্রার্থীদের কাউকে দেখা গেল বাঁশ হাতে জঞ্জাল সরাতে, কেউ ঘুরলেন ফুঁসতে থাকা গঙ্গার পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৬:৩৪
Share:

আমতলায় ত্রাণ শিবিরে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

ঘুর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর রোষে ভোট-মরসুমে রাজনৈতিক দলগুলির নির্ধারিত কর্মসূচি ওলটপালট হয়েছে। প্রথাগত প্রচারের বাইরে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হয়ে উঠল প্রচারের কৌশল।

Advertisement

লন্ডভন্ড বাংলায় সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার বার্তা দিলেন। সেই সঙ্গে নানা দলের প্রার্থীদের কাউকে দেখা গেল বাঁশ হাতে জঞ্জাল সরাতে, কেউ ঘুরলেন ফুঁসতে থাকা গঙ্গার পারে। তবে এর মধ্যেও অব্যাহত থাকল রাজনৈতিক তরজাও। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর রহমানেরা।

মমতা কলকাতার বড়বাজারে নির্বাচনী সভা থেকে এ দিন বলেছেন, “আমি সারা রাত তদারকি করেছি। অফিসারেরাও ছিলেন। ‘রিলিফ শেল্টারে’ বহু মানুষ আছেন। সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।” সেই সঙ্গে বর্ষার সময়ে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন-নির্ঘণ্টেরও সমালোচনা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলে আমতলায় ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আগের দিনই তিনি দলের কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন, নির্বাচনী প্রচারের চেয়ে আপাতত বিপন্ন মানুষের পাশে থাকায় নজর দিতে হবে।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের পাশাপাশি মথুরাপুরে নামখানার বাগডাঙায় এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদার। তৃণমূলেরই দমদমের প্রার্থী সৌগত রায়কে ধুতি গুটিয়ে কখনও বরাহনগরে বাঁশ হাতে ম্যানহোলের মুখ পরিষ্কার করতে, কখনও বা বরাহনগর উপনির্বাচনের দলীয় প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যাকে সঙ্গে নিয়ে ‘পে-লোডার’ চালিয়ে ভাঙা চিমনি সরাতে দেখা গিয়েছে। সেখানকারই বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত সোদপুর এইচবি টাউনে জলমগ্ন রাস্তায় নেমে জনসংযোগ করেছেন।

তবে সৌগতের নালা সাফের ছবি সামনে আসতেই বিষয়টিকে ‘দুর্বল চিত্রনাট্য’ ও ‘কাঁচা অভিনেতা’ বলে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর তোপ, “১৫ বছর ধরে সাংসদ (‌সৌগত)। ১৫ বছর ধরে পুরসভায় ক্ষমতায়। ১৩ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায়। কিন্তু নির্বাচনের আগে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কারণে জল জমে যাওয়ায় বাঁশ দিয়ে কী খোঁচাচ্ছেন উনিই জানেন!” তাঁর সংযোজন, “বাঁশটা কিন্তু দমদমের ভোটারদের চিনিয়ে দিলেন, পয়লা জুন আপনার ভাগ্যে তোলা থাকল!” পাশাপাশি, বিজেপির রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে এমন এক জন মুখ্যমন্ত্রী দরকার, যিনি শুধু ‘এক্স’-এ পোস্ট করা ছাড়া কিছু করেন। আপনি (মমতা) মোটেও বাইরে পা রাখেননি।” তাঁর দাবি, “চিন্তার কিছু নেই, এনডিআরএফ এবং বিজেপি নেতারা মাঠে নেমে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করছেন।”

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের রায়পুর, গদাখালি বুড়ুল এলাকায় দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের কাছে সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর রহমান। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমও। লুঙ্গি গুটিয়ে বৃষ্টি মাথায় সাতগাছিয়া ও বজবজ বিধানসভা এলাকার গঙ্গার পারে ঝড়-জলে বিধ্বস্ত মাটির বাড়িগুলিতে গিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর। তাঁর অভিযোগ, “মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে। সরকার যতটা গর্জন করেছে, তার চেয়ে কম বর্ষেছে!” এলাকার পরিস্থিতি দেখিয়ে অভিষেকের বহু কথিত ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর প্রকৃত হাল এমনই বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দার কাদা-মাটি ভেঙে পৌঁছে গিয়েছিলেন সন্দেশখালির বেড়মজুর-১ পঞ্চায়েতের ঘোলাপাড়ায়। তিনি বলেছেন, “মানুষ থাকলে, তবে তো ভোট-প্রচার। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দেখলাম, রান্না হয়নি। জ্বালানি নেই। মানুষের ভয়, নদীবাঁধ ভেঙে না জল ঢুকে যায়।” প্রায় হাঁটু জলে ভেঙে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের হালতুতে গাছ ভেঙে পড়া, বাতিস্তম্ভ উপড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। ভাঙড়, বারুইপুর-সহ সর্বত্র যাবেন জানিয়ে সৃজন বলেছেন, “রেড ভলান্টিয়ারেরা সর্বত্র সতর্ক রয়েছেন। প্রশাসনকে দ্রুত কাজ করার জন্য বলছি।” দক্ষিণ কলকাতার লিন্টন স্ট্রিটে হাঁটু জলে নেমে বিপন্ন বাসিন্দাদের খোঁজ নিতে দেখা গিয়েছে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমকে।

দমদম লোকসভা কেন্দ্রে জলমগ্ন এলাকায় সুজন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

দিনভর পথে থাকতে দেখা গিয়েছে এসইউসি প্রার্থীদেরও। মথুরাপুরের বিশ্বনাথ সর্দার পাথরপ্রতিমা ব্লকের জলমগ্ন এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কলকাতা উত্তরের দলীয় প্রার্থী বিপ্লব চন্দ্র, কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী জুবের রব্বানি-সহ এসইউসি-র প্রার্থীরা জলমগ্ন এলাকায় গিয়ে প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। দলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement