—ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সব মানুষকে বিনামূল্যে করোনার টিকা দেওয়ার যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, তা নিয়ে সরব হল বিরোধীরা। এর মধ্যে সব চেয়ে আক্রমণাত্মক বিজেপিই। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত আগেই করে দিয়েছে, রাজ্যে সেই ঘোষণাই করে ভোটের আগে ‘কৃতিত্ব’ নিতে চাইছে তৃণমূল সরকার। বাম ও কংগ্রেসের বক্তব্য, দেশের সব মানুষের জন্য নিখরচায় টিকাকরণের দাবি তোলা হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। রাজ্য সরকার ভোটের মরসুমে তার মধ্যে ঢুকতে চাইছে। শাসক দল তৃণমূল অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলছে, রাজ্য সরকার কাজ করে যদি ‘কৃতিত্ব’ই নিতে চায়, তাতে আপত্তি কীসের?
রাজ্য সরকার যে বিনামূল্যেই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জানিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিঠি পৌঁছতে শুরু করেছে। মোবাইলে বার্তা যাচ্ছে পুলিশ-কর্মীদের কাছেও। এই প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রবিবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘মোদীজি আগেই বলেছেন দেশের ১৩৫ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবেন। তা হলে আর বাকি কী থাকল! উনি (মমতা) সব কিছুতেই মোদীজি’র দেওয়া জিনিস নিয়ে বলেন, আমি দিলাম! চাল, বাড়ি, শৌচাগার, ত্রিপল সব কিছুই নিয়ে বলেছেন, আমি দিলাম। এটাও তাই।’’ দিলীপবাবুর আরও কটাক্ষ, ‘‘চাল-ত্রিপলের মতো এ বার টিকা-চুরি হবে! মুখ্যমন্ত্রী কি টিকা আবিষ্কার করেছেন?’’ বিজেপিতে সদ্য যোগ দেওয়া নেতা শুভেন্দু অধিকারী পুরুলিয়ায় কটাক্ষ করেছেন, ‘‘এই কর্মসূচির নাম টিকাশ্রী না দিয়ে দেন!’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও রাজনীতি করার জন্যই রাজ্য সরকার টিকার কথা বলছে। রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় আবার টুইটে মন্তব্য করেছেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন পিসি। চিকিৎসক থেকে পুলিশ, অনেকেই তার প্রতিবাদ করেছেন। এখন আবার কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার পরে তিনি কৃতিত্ব নিতে দৌড়চ্ছেন!’’
রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় টিকা জরুরি। আমরা চাই, সব মানুষ টিকা পান। টিকার কৃতিত্ব কে নিচ্ছে, তা অমূলক। রাজ্য সরকার যদি নেয়ও, তাতে অসুবিধা কীসের? রাজ্য সরকার কাজ করে, কৃতিত্ব নেয়। ভাষণ দিয়ে তো কিছু হাসিল হয় না!’’
রাজ্যের ঘোষণার ভোটের গন্ধ পাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসও। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বহরমপুরে বলেছেন, ‘‘এমন ঘোষণা আগে কেজরীবালও করে দিয়েছিলেন। আমরা বলেছি, দেশের সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হোক। এখন সামনে ভোট। মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নানা রকম ভোটের উপহার দিচ্ছেন। যদিও এটাকে নির্বাচনী ঘুষই বলব।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সকলকে টিকা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে, এই দাবি আমরা করেছিলাম। কেন্দ্র দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে, অন্তত মুখে বলেছে। মুখ্যমন্ত্রী এমন ভাবে এটা করছেন যে, ধরা পড়ে যাচ্ছেন! সামনে ভোট বলেই কি এই তৎপরতা?’’