দুই অভিযুক্তকে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার অনুমতি

পাড়ুই-কাণ্ডে আত্মসমর্পণকারী দুই অভিযুক্ত ভগীরথ ঘোষ ও সুব্রত রায়কে নিম্ন আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত বছর ২১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে বীরভূমের পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ খুনের অভিযোগ করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

জনাইয়ের জনসভায় বক্তৃতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

পাড়ুই-কাণ্ডে আত্মসমর্পণকারী দুই অভিযুক্ত ভগীরথ ঘোষ ও সুব্রত রায়কে নিম্ন আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

গত বছর ২১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে বীরভূমের পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ খুনের অভিযোগ করেছিলেন। ওই তালিকায় উপরের দিকেই নাম রয়েছে সুব্রত ও ভগীরথের। সাগরবাবুকে যে চার জন গুলি করে বলে শিবানীদেবীর অভিযোগ, তাঁদেরও অন্যতম এই সুব্রত-ভগীরথ। আগেই ধরা পড়েছে গুলি চালনায় অভিযুক্ত শেখ ইউনুস। চতুর্থ অভিযুক্ত, পাড়ুইয়ের কসবা এলাকার বাসিন্দা শেখ আসগর এখনও অধরা।

প্রায় এক বছর আত্মগোপন করে থাকার পরে এ বছরের ২৪ এপ্রিল সিউড়ি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ভগীরথ। সুব্রত আত্মসমর্পণ করেন ২১ মে। আত্মসমর্পণের কারণ হিসেবে সেই সময় ওই দুই অভিযুক্তই দাবি করেছিলেন, তাঁরা নির্দোষ। তদন্তে সেটাই প্রমাণিত হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। কিন্তু তা হয়নি। পরবর্তী কালে পাড়ুই-কাণ্ডের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট আদালতে জানিয়ে দেয়, ওই দু’জন নিজেদের দোষ কবুল করেছেন। ওই দুই অভিযুক্তের আইনজীবী তাপস ঘোষ আদালতে জানান, পুলিশের ওই বক্তব্য মেনে নিতে না পেরে ভগীরথ ও সুব্রত সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আবেদন জানান। নিম্ন আদালত জানায়, পুলিশ বিচারকের কাছে অভিযুক্তদের গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর আবেদন জানায়নি। সেই কারণে অভিযুক্তদের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। তা-ই অভিযুক্তেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।

Advertisement

অভিযুক্তদের পক্ষের অন্য আইনজীবী তন্ময় রায়চৌধুরী এ দিন অভিযোগ করেন, পাছে অভিযুক্তেরা নতুন কোনও তথ্য পেশ করেন, তাই পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দু’জনের গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর আর্জি জানায়নি। তন্ময়বাবুর দাবি, ওই তথ্য বিচারকের কাছে পেশ হলে পাড়ুই-কাণ্ডের মোড় অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারে। বিচারপতি অসীমকুমার মণ্ডল ওই দুই অভিযুক্তের আর্জি মেনে নেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে ওই দু’জন গোপন জবানবন্দি দিতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি। এই নির্দেশের ফলে নিম্ন আদালতকে ওই দুই অভিযুক্তের গোপন জবানবন্দি নিতেই হবে। সুব্রত আর ভগীরথকে এখন নিম্ন আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে।

এ দিনই পাড়ুই-কাণ্ডের অন্য একটি মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। সেখানে ডিজি কেন আদালতে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানাবেন না, সেই প্রশ্নও তোলে হাইকোর্ট। ওই মামলায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনাও করেছে আদালত। ভগীরথ, সুব্রতর দায়ের করা মামলাতেও হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত পুলিশের বিরুদ্ধেই গেল বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

পাড়ুই মামলার সঙ্গে জড়িত এক পুলিশ কর্তার মন্তব্য, “অনুব্রতকে গ্রেফতার না করা নিয়ে একটি মামলায় এমনিতেই প্রচণ্ড চাপে রয়েছে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন। এখন ভগীরথ আর সুব্রত গোপন জবানবন্দিতে অনুব্রতদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে পুলিশের উপরে চাপ আরও বাড়বে। অনুব্রতকে গ্রেফতার না করে পুলিশ যে ঠিক কাজ করেনি, তা প্রমাণ করা সহজ হয়ে যাবে হাইকোর্টে দু’টি মামলার আবেদনকারীদের।” সুব্রত রায় কিন্তু আত্মসমর্পণের দিন সিউড়ি কোর্ট চত্বরে সাগরবাবুর খুনে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী কিছু লোক তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে। সত্যিটা বলতেই তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement