অভিযুক্ত আবু সেলিম।
বিতর্ক তাঁর বরাবরের সঙ্গী। এ বার পুলিশ হেফাজতে এক বৃদ্ধের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ উঠল রামপুরহাটের আইসি আবু সেলিমের বিরুদ্ধে।
মৃতের নাম হুকু শেখ (৬০)। বাড়ি রামপুরহাট শহরের বগটুই এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরহাটের এসিজেএম রাজেশ গুহ রায়ের এজলাসে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের ছেলে রমজান। তাঁর অভিযোগ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ লক-আপে মারধরের চোটে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। এসডিপিও, এসপি এবং ডিআইজি (বর্ধমান)-র কাছে অভিযোগ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ দিন এসিজেএম রমজানের অভিযোগকেই এফআইআর হিসাবে দেখে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপারকে।
আবু সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা নতুন নয়। কিন্তু, সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের উপরতলা কখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ। বিরোধী দলের সদস্যকে থানা থেকে অপমান করে বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে কোমরে দড়ি পরিয়ে অভিযুক্তদের শহরে ঘোরানোর ঘটনা— বারবার নানা অভিযোগ উঠেছে রামপুরহাটের আইসি-র বিরুদ্ধে। গত বছর আইসি-র বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে পোস্টার পড়েছিল। বিরোধী দলগুলিও তাঁর অপসারণ চেয়ে সরব। সেলিমের বদলি চেয়ে এসডিও, এসডিপিও-র কাছে এসইউসি স্মারকলিপি দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে আইসি-র বিরুদ্ধে সরাসরি তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তোলে বিজেপি।
এ দিনও হুকু শেখের ঘটনার পর আইসি-র বিরুদ্ধে নতুন করে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল।
কী হয়েছিল সে দিন? রমজান সেখের আইনজীবী আব্দুল বারির দাবি, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রমজান ও হুকু বামনি গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। তিন মাথা মোড়ে আইসি কিছু পুলিশ নিয়ে হুকু সেখকে বিনা কারণে মারধর করতে থাকেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন হুকু। রমজানের অভিযোগ, ‘‘বাবাকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে থানার লক-আপে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেও মারধর করা হয়েছিল। পরে জানতে পারি, আইসি ঘটনা ধামাচাপা দিতে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবাকে।’’ পর দিন হাসপাতালে গিয়ে তিনি দেখেন, বাবা মারা গিয়েছেন।
কেন তাঁর বাবাকে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ, তা তিনি আজও জানেন না বলেই দাবি রমজানের। এত দিন বাদে কেন অভিযোগ করলেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই পরিবারের কয়েক জন পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে বারণ করছেন। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে, তা হলে তো বাবার খুনের বিচারই হবে না! পুলিশের উপরমহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। আমি চাই দোষীরা শাস্তি পাক। তাই আদালতে এসেছি।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আইসি আবু সেলিম। ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। এসএমএসের উত্তরও দেননি। জেলা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই রাতে একটি মাঠে পড়েছিলেন হুকু শেখ। তাঁকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, সেরিব্রাল স্ট্রোকে মারা গিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। — নিজস্ব চিত্র