প্রতীকী ছবি।
অভিযুক্তকে গ্রেফতারের তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়েছিল। তা দেখে স্বয়ং বিচারকই হতবাক!
দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ‘অ্যারেস্ট মেমো’য় যে-সময়ে গ্রেফতার করার উল্লেখ রয়েছে, হিসেবমতো অভিযুক্ত তখন থানায় বসে। অথচ মেমোয় গ্রেফতারের স্থান হিসেবে অন্য জায়গার উল্লেখ রয়েছে। আবার ওই অভিযুক্তকে তার আগে গ্রেফতার করার অন্য একটি অ্যারেস্ট মেমো আদালতে জমা দিয়েছিল পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে দ্বিতীয় বার ঠিক কাকে গ্রেফতার করা হল?
উস্তি থানার পুলিশের এই ধরনের বিভ্রান্তিকর, গোলমেলে কাজ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মনদীপ সিংহরায়। বিচারকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মামলার তদন্তকারী অফিসার। বিচারক তাঁর নির্দেশে লিখেছেন, এই গ্রেফতারি আইনি নয়। তাই অভিযুক্ত অনুপ হালদারকে এই মামলা থেকে মুক্ত করে দিচ্ছেন তিনি। এমন ভুলের যাতে পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, সেই ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিচারক। সতর্ক করা হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের এসপি-কেও।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার কনভয়ে হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনায় উস্তি থানার পুলিশ যে-মামলা করেছিল, তাতেই গ্রেফতার করা হয় অনুপকে। উস্তি থানা ৪০১/২০২০ নম্বর মামলায় ১৩ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে অনুপকে শ্রীচন্দ্র এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ৪০২ নম্বর মামলার নথি বলছে, ১৩ ডিসেম্বর রাত ৯টায় শ্রীচন্দ্র থেকেই অনুপকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। হিসেব অনুযায়ী তিনি রাত পৌনে ১০টায় পুলিশি হাজতে ছিলেন। তা হলে শ্রীচন্দ্র এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হল কী ভাবে? বিচারক
প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি একই লোককে ফের ওই জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল? তদন্তকারী অফিসার তার জবাব বা ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ওই মামলার কেস ডায়েরিতেও ছত্রে ছত্রে অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেছেন বিচারক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নথিভুক্তির ক্ষেত্রেও অসঙ্গতি আছে।
নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের তিন আইপিএস-কর্তাকে ডেপুটেশনে নিতে চেয়ে চিঠি পাঠায়। তাঁরা হলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ), ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) এবং ডায়মন্ড হারবারের তৎকালীন পুলিশ সুপার (যদিও তিনি পরে বদলি হয়ে গিয়েছেন)। সেই সূত্রেই অনেকে মনে করছেন, তড়িঘড়ি গ্রেফতার করে বিষয়টি সামাল দিতে গিয়েই আরও গুলিয়ে ফেলেছে পুলিশ।