দুর্ঘটনার আট দিন পর মৃত্যু ঋষভের। ফাইল চিত্র।
হুগলিতে পুলকার দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুই স্কুলপড়ুয়া ঋষভ সিংহ এবং দিব্যাংশু ভগতের বিপদ কাটেনি। শনিবার এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, সামান্য উন্নতি হলেও দু’জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়।
এসএসকেএম সূত্রের খবর, শরীর থেকে যে পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) নির্গত হয়, সাত বছরের ঋষভের ফুসফুস তাতে সহায়তা করছিল না। শরীরে বাড়তি CO2 থাকলে তা মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড-সহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। তাই ইকমো (একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় মেডিক্যাল বোর্ড।
এসএসকেএমের মেডিক্যাল সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘ঋষভের শরীরে CO2-এর মাত্রা বেড়ে ১০৭ হয়ে যায়, যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। রাতে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।’’ চিকিৎসকেরা জানান, ঋষভের ফুসফুস কাজ না-করায় হৃৎপিণ্ডের কাজও ব্যাহত হয়। এমন অবস্থায় ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ডের কাজ কৃত্রিম উপায়ে চালাতে সাহায্য করে ইকমো যন্ত্র। শিশুদের জন্য যন্ত্রটি কেনা থাকলেও শুক্রবারই তা প্রথম ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় সার্কিট না থাকায় রাতে দ্রুত তা আনানোর ব্যবস্থা করেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।
এই পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শরীর থেকে অক্সিজেনহীন রক্তকে বার করে কৃত্রিম ফুসফুসে (অক্সিজেনেটর) তা ঢোকানো হয়। অক্সিজেন যুক্ত এবং CO2 বিযুক্ত হওয়ার পরে শুদ্ধ রক্ত যন্ত্রের মধ্যে হৃৎপিণ্ডের পরিবর্ত পাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে রক্ত শরীরে ঢোকানো হয়। ঋষভের ক্ষেত্রে কত দিন এই পদ্ধতি চালানো হবে, তা বলা সম্ভব নয়। ইকমো পদ্ধতিতে সাড়া না-মিললে ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া রাস্তা নেই বলে মত চিকিৎসকদের।
দিব্যাংশুর ফুসফুসের অবস্থা তুলনায় ভাল। এ দিন সকালে তাকে কিছু ক্ষণ ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়েছিল। প্রাথমিক সিটি স্ক্যানের পর চিকিৎসকদের মত, মস্তিষ্কে আঘাত তত গুরুতর নয়। অবস্থা আর একটু ভাল হলে এমআরআই হতে পারে। বিকেলে তার ‘সেন্ট্রাল লাইন’ করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, শরীরে জলের পরিমাণ বুঝতে তা করা হয়। এ ছাড়া, অনেক ওষুধ ছোট শিরার মাধ্যমে দিলে ক্ষতি হতে পারে। তাই সেন্ট্রাল লাইন করে অর্থাৎ বড় শিরার মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া হয়।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এ দিন এসএসকেএমে গিয়ে দিব্যাংশুদের দেখতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। দিব্যাংশুর মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে চুঁচুড়ায় সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।