আবাস যোজনার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে আরও কড়া রাজ্য সরকার। ফাইল ছবি।
বরাদ্দের টাকাতেই তৈরি করতে হবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে পারবেন না উপভোক্তারা। শুধু তা-ই নয়, বাড়ির আয়তনও কোনও ভাবেই ২৭০ বর্গফুটের বেশি হবে না। এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। এই নিয়ম যাতে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়, তা নজরদারি করার জন্য তৈরি হচ্ছে একটি বিশেষ দলও। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নানা অজুহাতে বার বার আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়েছে। এ বার যাতে কোনও রকম অজুহাত খাড়া করতে না পারে, তাই জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’’
তিন কিস্তিতে সরকারি অনুদানের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় আদৌ বাড়ি তৈরি সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান উপভোক্তাদের একাংশ। সম্প্রতি আবাসের কাজ নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেছে। মালদহ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যের কাছে নিজেদের আশঙ্কা কথাও জানিয়েছেন অনেকে। তার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এত দিন আবাস যোজনায় সরকারি অনুদানের সঙ্গে নিজস্ব তহবিল যোগ করে বাড়ি তৈরি করতে পারতেন উপভোক্তারা। কিন্তু সাম্প্রতিক সরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই ছাড়ের কারণেই প্রাসাদের চেহারা নিয়েছে আবাস যোজনার বাড়ি! বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সমীক্ষা চলাকালীন এ রকম বেশ কিছু প্রাসাদোপম বাড়ির অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়ে বিতর্কও হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই বিষয়গুলি নজরে রেখেই আবাস প্লাস যোজনার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে এ বার ‘অতিসতর্ক’ রাজ্য সরকার।
আবাস প্লাস যোজনায় তিন ধাপে ঝাড়াইবাছাইয়ের পর সংশোধিত তালিকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তা কেন্দ্রীয় পোর্টালে আপলোড করার কাজও হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনুদানের অর্থ ঢোকার অপেক্ষা। তার আগে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাড়ির মাপ যাতে ২৭০ বর্গফুটের বেশি না হয়, তার নজরদারি করবেন নির্মাণ সহায়ক। কোনও অসঙ্গতি থাকলে, ১৫ দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে ব্লক প্রশাসনের কাছে।
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার ৯০ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। এই নির্দেশ যাতে ঠিক ভাবে মানা হয়, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, বাড়ি নির্মাণের কাজ সময় মতো শেষ হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখতে বলা হয়েছে বিডিও এবং মহকুমাশাসকদের। শুধু নজর রাখাই নয়, প্রতি মাসে তার রিপোর্ট জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছেও পাঠাতে হবে।
আবাস প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক সরকারি আধিকারিক জানান, নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য সরাসরি উপভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মীদের।