শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ফাইল চিত্র।
আবাস যোজনায় রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠা অব্যাহত। তবে এ বার বিভিন্ন জেলায় প্রশ্ন উঠছে বিজেপি-কে নিয়েও।
আবাস যোজনায় ‘যোগ্যেরা’ বাড়ি পাননি— কেন্দ্রের কাছে এমনই অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি নেতারা। তবে তা যাচাই করতে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে কেন্দ্রীয় দল দেখল, অভিযোগকারীদের হয় পাকা বাড়ি, নয়তো কেউ কেউ আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েওছেন। শুক্রবার সবংয়ের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত এলাকায় আবাসের কাজ দেখতে যায় দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় দল। ওই পঞ্চায়েতের ১৪ জন আবাসে বঞ্চিত বলে অভিযোগ ছিল। তবে কেন্দ্রীয় দলে থাকা সবংয়ের বিডিও তুহিনশুভ্র মোহান্তি বলেন, “যাঁরা বাড়ি পাননি দাবি করেছেন, তাঁদের অনেকের পাকা বাড়ি আছে অথবা পরে আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন।”
ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। তৃণমূলের সবং ব্লক সভাপতি আবুকালাম বক্স বলেন, “কেন্দ্রীয় দল এসে দেখল, বিজেপির অভিযোগ মিথ্যা।” বিজেপি নেতা অমূল্য মাইতি পাল্টা বলছেন, “সবংয়ের বহু তৃণমূল নেতা-কর্মীর নাম দিয়েছিলাম, যাঁদের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও নাম এসেছিল। তড়িঘড়ি সে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”
মালদহে একই বাড়িতে পৃথক ভাবে দু’টি কেন্দ্রীয় দলের তদন্তের নজিরও রয়েছে। তবে দু’বারের মধ্যে এক বারও হবিবপুর, বামনগোলা, গাজল এবং পুরাতন মালদহে যায়নি কোনও দল। এই চার ব্লকের অধিকাংশ গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসন বিজেপির দখলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কেন্দ্রীয় দল জেলার সর্বত্র যাচ্ছে না। বিশেষ করে, বিজেপির দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলিতেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেখানে তদন্ত হল কই?” রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূলের সাবিনা ইয়াসমিনের মন্তব্য, “বিজেপির কথায় কেন্দ্র জেলায় বার বার দল পাঠাচ্ছে।” যদিও উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “আবাসে কেন্দ্রীয় তদন্ত নিয়ে তৃণমূলের ভয় মানুষ বুঝতে পারছেন। তাতে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই।” তদন্তে আসা কেন্দ্রীয় দলের এক সদস্য আশিস শ্রীবাস্তব বলেন, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত এসেছি।’’
রাজ্যের অন্যত্র শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা থামেনি। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের বেতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা ইসমাইল মল্লিকের দোতলা পাকা বাড়ি দেখে হতবাক। ইসমাইলের স্ত্রী সাবেরা বিবি দাবি করেন, ওই বাড়িটি তাঁর জায়ের। কেন্দ্রীয় দল তাঁর বাড়ি কোনটি জানতে চাইলে, সাবেরা পাশের একটি কাঁচা মাটির বাড়ি দেখিয়ে দেন। আর জা হিসাবে দেখান এক বিবাহিতা তরুণীকে। তখন গ্রামবাসী জানান, ওই তরুণী আসলে সাবেরার মেয়ে ইসমতারা। মহিষাদলের বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডল ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যা ভুলভ্রান্তি হয়েছে, সংশোধন করে নেওয়া হবে।’
আবাসে বঞ্চনা-সহ একাধিক অভিযোগে এ দিন আলিপুরদুয়ার ২ ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী’র নেতারা। বর্ধমান ১ ব্লকের কোমলপুর গ্রামে বিজেপি করার জন্য নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগকারী রাইমা বেগমের বাড়ি যান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া মাটির দোতলা বাড়ি, নীচের তলা বসবাসের অনুপযুক্ত। বিডিও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে কেন্দ্রীয় দলকে জানান।