সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রধান মন্ত্রীর।
দেশকে আত্মনির্ভর করতে সাহায্য করতে পারেন আইআইটির পড়ুয়ারাই। কারণ তাঁদের সেই ক্ষমতা আর দক্ষতা আছে। আইআইটি খড়গপুরের ৬৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের মানুষের স্বার্থে তাই এখন থেকেই আইআইটি পড়ুয়াদের গবেষণা ও আবিষ্কারের কাজ শুরু করতে বললেন মোদী। বললেন, ‘‘সমস্যার সমাধান করাই হোক আপনাদের মূল লক্ষ্য। মনে রাখতে হবে আত্মত্যাগই বড় শক্তি। একবার ব্যর্থ হলে থেমে গেলে চলবে না। ব্যর্থতাকে সদর্থক ভাবে নিয়ে দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে।’’
দিল্লি থেকে খড়গপুরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পড়ুয়াদের তিনি বলেন, ভারত আত্মনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কোভিড পরবর্তী কালে দেশকে সব দিক থেকে স্বনির্ভর করে তুলতে চাইছে। তবে তার জন্য প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানে উন্নতি জরুরি। দেশের মানুষের কথা ভেবে তাদের জন্য গবেষণা ও আবিষ্কার করে আইআইটির পড়ুয়ারা সেই চাহিদা মেটাতে পারেন।
পড়ুয়াদের মোদী বলেন, নতুন ভারত গড়তে হবে। আগামী দিনের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে আবিষ্কার করতে হবে। ‘‘এমন বিষয়ে গবেষণা করুন বা আবিষ্কার করুন, যার সুবিধা মানুষ সরাসরি কাজে লাগাতে পারবে।’’ উত্তরাখণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেন, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলায় আরও বেশি করে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আপনাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। আপনারা এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিতে পারেন। আপনাদের এই কাজ যেমন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে, তেমনই আমরা যে আত্মনির্ভর ভারত গড়তে চাইছি, দেশকে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে উন্নত করতে চাইছি, সেই উদ্দেশ্যও সফল করতে সাহায্য করবে।’’
করোনা পরবর্তী পর্যায়ে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গবেষণা ও আবিষ্কার একটি বড় ভূমিকা নিতে পারে জানিয়ে মোদীর বার্তা, ‘‘সমাবর্তন শুধু ডিগ্রি হাতে পাওয়ার দিন নয়। ১৩০ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিনিধি আপনারা। মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণ করা হবে আপনাদের মূল লক্ষ্য। আগামী দিনে কী দরকার হতে পারে, তা আজই ঠিক করে নিতে হবে। কারণ সেই ক্ষমতা আপনাদের আছে। সমস্যার সমাধানের লক্ষ্য স্থির করে এগোতে থাকুন।’’ এর পাশাপাশি যেকোনও ধরনের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সৌরশক্তিকে কাজে লাগানোয় জোর দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবর্তনে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতির প্রসঙ্গও তোলেন মোদী। বলেন, শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রের যে নতুন নীতি আসতে চলেছে, তা ছাত্রছাত্রীদের অনেক সাহায্য করবে। পড়ুয়াদের উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘রাস্তা ভুল, না ঠিক ভাববেন না। কাজ করে যাবেন। তাতে সময় নষ্ট হবে না। অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে। তবে নিজস্বতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এগাবে ভারত।’’
করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে সবরকম সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল আইআইটি খড়গপুর। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৯টি সংস্থার স্বর্ণ পদক জয়ী এবং ৭৬টি সংস্থার রৌপ্য পদক জয়ীরা অনুষ্ঠানে সশরীরে হাজির ছিলেন। এছাড়া ২৮০০-র বেশি শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানেই। অনুষ্ঠান দেখার জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট http://iitkgp.ac.in/convocation/ চালু করেন খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ।
এই ভার্চুয়াস সমাবর্তন উৎসব বা ই-সমাবর্তন প্রসঙ্গে ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কে তেওয়ারি বলেন, ‘‘যাঁরা এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারছেন না, তাঁদের দুঃখ প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার এই ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবে একসঙ্গে ডেকে আনা যায় কি না, তা ভেবে দেখা হবে অবশ্যই।’’