বারাসতের সভায় ‘নির্যাতিতা’-দের মুখোমুখি হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। — ফাইল চিত্র।
বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লি থেকে আগেই জানিয়েছিলেন। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ মার্চ বারাসতের কাছারি মাঠে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্য বিজেপির পরিকল্পনা, সেই সভায় সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’-দের উপস্থিত করানো হবে। আলাদা মঞ্চ করে বসানো হবে তাঁদের। সেখানে মুখ ঢেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হবেন তাঁরা।
রাজ্য বিজেপি জানিয়েছিল, মার্চের প্রথম সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সন্দেশখালিতে মহিলাদের ‘নির্যাতন’ নিয়ে কথা বলতে পারেন। পরে সুকান্ত দিল্লিতে বসে সেই তারিখ নিশ্চিত করেন। ৬ মার্চ বারাসতে ‘মহিলা সম্মেলন’ করবেন প্রধানমন্ত্রী। মূল মঞ্চের পাশে আলাদা একটি মঞ্চ গড়া হবে। সেখানেই মুখ ঢেকে বসবেন ‘নির্যাতিতা’-রা। জানাবেন তাঁদের ‘নিগ্রহ’, সমস্যার কথা। দর্শকাসনেও থাকবে মহিলাদের আধিক্য।
২৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। ওই দিন নদিয়ার মায়াপুরে ইস্কনের মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। এর পর রানাঘাট-সহ আশপাশের কয়েকটি লোকসভার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল। সেই সফর বাতিল হয়েছে। এই নিয়ে খুব একটা মুখ খুলতে চাইছেন না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, সন্দেশখালিকাণ্ডের জেরেই রাজ্য সফর আপাতত স্থগিত রাখলেন শাহ। পাশাপাশি, বিজেপি সূত্রে এ-ও খবর যে, রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও চাইছিলেন না, যে এই সময় বঙ্গ সফরে আসুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সন্দেশখালির আন্দোলনকে বৃহত্তর করে তুলতে প্রায় প্রতি দিনই রাস্তায় নামছেন তাঁরা। তাই এই সময় শাহ যদি রাজ্য সফরে আসেন, তা হলে তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে রাজ্য নেতৃত্বকে। ফলে তাঁদের আন্দোলনে ভাটা পড়তে পারে। আপাতত রাজ্য বিজেপির লক্ষ্য, মোদীর ‘মহিলা সম্মেলন’-কে সফল করা।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে আবার উত্তপ্ত সন্দেশখালি। শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা-সহ কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। সামনের সারিতে রয়েছেন মূলত মহিলারা। তাঁদের একাংশ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এর পরেই সরব হয় বিজেপি। তারা অভিযোগ করে, সন্দেশখালিতে ধর্ষিত হয়েছেন মহিলারা। আঙুল তোলেন তৃণমূল নেতাদের একাংশের দিকে। যদিও রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, যখন সেখানে পরিদর্শনে তারা গিয়েছিল, কোনও ধর্ষিতার দেখা পায়নি। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরা দু’বার সন্দেশখালিতে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বার গিয়েছেন, কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে সেখানে ধর্ষণের কথা বলা হয়।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বিজেপির জাতীয় সম্মেলন। সেই বৈঠকে ‘বিকশিত ভারত’ প্রস্তাব এনেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ। তাতে সরকারের নানা সাফল্যের কাহিনির সঙ্গেই জায়গা পেয়েছিল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গলাতেও শোনা গিয়েছে সন্দেশখালির কথা। তিনি মমতার সরকারের নিন্দা করেন। বস্তুত, সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বিবৃতি দেন। সন্দেশখালির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। মঙ্গলবার সেখানে গিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালেরা। এই প্রেক্ষিতে মোদীর বাংলা সফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।