একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ তিন প্রার্থীর। রবিবার ঝালদায়। নিজস্ব চিত্র।
কংগ্রেস কাউন্সিলর খুন হওয়ার পরে, তেতে উঠেছিল এলাকা। শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক চাপান-উতোর। সুর চড়েছিল প্রচার-পর্বেও। কিন্তু ভোটের দিন আলাদা ছবি দেখা গেল পুরুলিয়ার ঝালদায়। আড্ডা-গল্পে মাতলেন নানা দলের প্রার্থীরা। মধ্যাহ্নভোজও সারলেন একসঙ্গে। রবিবার ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে এমন সৌহার্দ্য দেখা গেল কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যে।
গত পুরভোটে এই ওয়ার্ডে জেতার কয়েক দিন পরে, গুলিতে খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। ওই ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তথা তপনের ভাইপো দীপক কান্দু, তাঁর বাবা নরেন কান্দু-সহ পাঁচ জন খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। সম্প্রতি মামলার প্রাথমিক চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। এ দিন ওই ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে দু’টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট পড়েছে ৮০.৮৬ শতাংশ।
সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে ঝালদা হাইস্কুল চত্বরে বুথের কাছে একটি বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায় কংগ্রেস প্রার্থী তথা তপনের ভাইপো মিঠুন কান্দু, তৃণমূল প্রার্থী জগন্নাথ রজক ও বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসকে। স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে শোনা যায় তাঁদের। এই ক’দিন কার কেমন পরিশ্রম গিয়েছে, কে কেমন ভোট পেতে পারেন, সে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও চলে। দুপুর ১টা নাগাদ হোটেল থেকে রুটি, পনিরের তরকারি আনিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিন প্রার্থী। বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার খানিক আগে, আশপাশে থাকা দলীয়কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তিন জন চা-নিমকি খান।
কংগ্রেস প্রার্থী মিঠুন, বিজেপি প্রার্থী পরেশদের কথায়, ‘‘এটা পাড়ার ভোট। আমরা সারা বছর মিলেমিশে থাকি। এটাই ঝালদার সংস্কৃতি।’’ তৃণমূল প্রার্থী জগন্নাথের দাবি, ‘‘তপন কান্দু খুন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। ভোট আসবে-যাবে, খামোখা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করব কেন!’’ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া থেকে জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রঙ্গারও বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক মতভেদের প্রভাব যেন ব্যক্তিগত সম্পর্কে না পড়ে, সেটাই আমরা চাই।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো দাবি করেন, ‘‘এটি নতুন কোনও বিষয় নয়। এখানে ভোট মানে উৎসব। সম্প্রতি কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ এই পরম্পরা কলুষিত করতে চেয়েছেন। ঝালদার শান্তপ্রিয় মানুষ তা সফল হতে দেবেন না।’’