—প্রতীকী চিত্র।
পুরো ঘটনা ঘটাতে সময় লাগছে বড়জোর ৩০ সেকেন্ড!
ভরসন্ধ্যায় দমদমগামী মেট্রো এসে থামল এসপ্লানেড স্টেশনে। ভিড়ে ভিড়াক্কার কামরা থেকে যাত্রীদের নামার চেষ্টার মধ্যেই সেই কামরায় ওঠার জন্য প্রায় আছড়ে পড়লেন প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীরা। প্রবল ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই পরনের জিন্সের পকেটে আচমকা হ্যাঁচকা টান অনুভব করলেন কামরার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণ এবং তরুণী। কী ঘটল, বোঝার জন্য কয়েক মুহূর্ত পরে তাঁরা পকেটে হাত ঢোকাতেই দেখলেন, সঙ্গে থাকা মোবাইল উধাও! সন্দেহভাজনকে ধরার চেষ্টা করার আগেই ভিড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে সে। ট্রেনও তত ক্ষণে চলতে শুরু করেছে। চাঁদনি চকে নেমে রীতিমতো হাহুতাশ করছিলেন বছর ২৬-এর ওই যুগল। প্ল্যাটফর্মে থাকা আরপিএফ কর্মীর সাহায্য চাইলেন তাঁরা। তিনি এসপ্লানেডে ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে ধরলেন তাঁর সহকর্মীকে। কিন্তু কোথায় কী! চোর তত ক্ষণে চম্পট দিয়েছে। ময়দান থেকে শোভাবাজার আসছিলেন ওই তরুণ এবং তরুণী।
উপরের ঘটনাটি দিনকয়েক আগের। শুধু সে দিন বলেই নয়, পুজো এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোয় যাত্রীদের বাঁধভাঙা ভিড় শুরু হতেই এমন ঘটনা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে মেট্রোকর্মীদের একাংশ। মেট্রোয় ততটা নিয়মিত সফর করেন না, পুজোর বাজারের কল্যাণে এমন যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে বিকেল এবং সন্ধ্যায়। মূলত সেই সময়কেই মোবাইল, পার্স, ছোট হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বেছে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এমন যাত্রীরা কিছুটা অসতর্ক বা অন্যমনস্ক থাকলেই ঘটছে বিপদ।
সমস্যা ঠেকাতে কী করণীয়, তা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষও। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্টেশন থেকে এমন একাধিক অভিযোগ আসছে। সব চেয়ে বেশি এমন ঘটনা ঘটছে দমদম, শ্যামবাজার, এসপ্লানেড, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাটের মতো তুলনামূলক ভাবে বেশি ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে। ওই সব স্টেশনে পুজোর বাজারের ভিড় হচ্ছে যথেষ্ট। তারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। রেলরক্ষী বাহিনীর আশঙ্কা, চেনা দুষ্কৃতীদের বাইরে অন্য দুষ্কৃতীদের একাংশও এই কাজে যুক্ত থাকতে পারে। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপরাধে আটক হওয়া দুষ্কৃতীদের ছবি কিছু মেট্রো স্টেশনের নোটিস বোর্ডে লাগানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পুজোর মুখে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের পরামর্শ, যাত্রীরা যেন কামরার দরজার কাছে ভিড় করে না দাঁড়ান। কারণ, ওই ভিড়কেই অপরাধীরা আদর্শ পরিস্থিতি হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করছ।’’ মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের এ-ও বলছেন, তাঁরা যেন মোবাইল, পার্স প্রভৃতি পকেটে বা আলগা কোনও জায়গায় না রেখে সম্ভব হলে ব্যাগে রাখেন। তবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় সেখানে এমন অভিযোগ মেলেনি।
মেট্রো সূত্রের খবর, বিভিন্ন স্টেশনে এমন অপরাধে অতীতে ধরা পড়া অভিযুক্তদের ছবি প্ল্যাটফর্মের টিভিতে দেখিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করার কথা ভাবা হচ্ছে। দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে সম্প্রতি ‘ফেস রেকগনিশন ক্যামেরা’ বসিয়েছে রেল। ওই ক্যামেরার সার্ভারে অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকলে তাদের স্টেশনে ঢুকতে দেখা গেলেই আধিকারিকদের কাছে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে সতর্কবার্তা পৌঁছয়। ভবিষ্যতে মেট্রোয় এই প্রযুক্তি এলে অপরাধীদের ধরা সহজ হবে বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। তার আগে মেট্রোর রক্ষীদের তৎপরতা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতনতার উপরে জোর দিতে চাইছেন কর্তারা।