প্রতীকী ছবি।
তেলের শুল্কে মোদী সরকারের পৌষ মাস। আর জ্বালানির দরে নাভিশ্বাস আমজনতার।
আজ কলকাতায় পেট্রলের দাম লিটার পিছু ১১০ টাকার গণ্ডিও পেরিয়ে গেল। আইওসি-র পাম্পে ৩৬ পয়সা বেড়ে দাঁড়াল ১১০.১৫ টাকা। ডিজ়েলও ৩৭ পয়সা বেড়ে হল ১০১.৫৬ টাকা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম এবং যাতায়াতের খরচ কোথায় পৌঁছবে, সেই প্রশ্নে ক্ষোভে ফুটছে গোটা দেশে। অথচ তেলের এমন বাড়তে থাকা দামের হাত ধরে কেন্দ্রের রাজকোষ যে ফুলেফেঁপে উঠছে, তা সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। রবিবার খোদ কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টসের (সিজিএ) হিসাব বলছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন শুল্ক খাতে সরকারের আদায় ৩৩% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। আর অতিমারির আগের ২০১৯-২০ সালের ৯৫,৯৩০ কোটির থেকে সেই আদায় বেশি ৭৯%। সংশ্লিষ্ট মহলের আক্ষেপ, কর থেকে এত টাকা তুলছে সরকার। অথচ আমজনতার সুরাহার স্বার্থে তার সামান্য অংশ ছাড়তে পারছে না।
লকডাউনের আগে গত বছর মার্চে এবং তা চলাকালীন মে-তে, দু’দফায় পেট্রলে উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে লিটারে ১৩ টাকা, ডিজ়েলে ১৬ টাকা। তখন বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ছিল তলানিতে। সব মিলিয়ে জ্বালানি দু’টিতে এখন শুল্ক যথাক্রমে ৩২.৯ টাকা ও ৩১.৮ টাকা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর যুক্তি, ইউপিএ সরকারের ছাড়া ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকার তেল-বন্ডের কিস্তি মেটাতে ও করোনার যুঝতে করা নানা পদক্ষেপের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শুল্ক ছাঁটা যাচ্ছে না। বিশেষত, যখন বিশ্ব বাজারে তেল ব্যারেলে ৮৩ ডলারের আশেপাশে। রাজ্যগুলি যুক্তমূল্য কর না-বাড়িয়েও বেশি টাকা তুলছে।
সংশ্লিষ্ট মহল যদিও মনে করাচ্ছে, সিজিএ জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে শুধু উৎপাদন শুল্ক থেকে সরকার তুলেছিল ২.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা। আর গত বছর করোনার মধ্যে তা ছিল ৩.৮৯ লক্ষ কোটি। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে শুল্ক না-বাড়িয়েও শুধু টানা তেলের দাম বৃদ্ধির জেরে ছ’মাসে কেন্দ্রের ঘরে অতিরিক্ত প্রায় ৪২,৯৩১ কোটি টাকা ঢুকেছে। যা সারা বছরের ১০,০০০ কোটির বন্ডের দায়ের চারগুণ। ধারণা, পুরো অর্থবর্ষে বাড়তি আদায় ১ লক্ষ কোটি ছাড়াবে। ফলে চাইলে কেন্দ্র শুল্ক ছাঁটতেই পারে।