—ফাইল চিত্র
কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হল হাইকোর্টে। আদালত সূত্রে খবর, উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সরণির বাসিন্দা শরদকুমার সিংহ নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে বুধবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে, ওই মামলার শুনানির দিন এখনও নির্দিষ্ট হয়নি।
বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার ৫ বছরের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের জেরে পুরসভা নির্বাচন না হওয়ায়, নতুন পুর বোর্ড তৈরি হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে বুধবার রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসক নিয়োগ করে কলকাতা পুরসভায়। তৈরি করা হয় বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস। সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বোর্ডের বাকি সদস্যরাও সবাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। প্রশাসনিক নির্দেশনামার ভিত্তিতে, মেয়াদ উত্তীর্ণ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন শরদকুমার।
ওই ব্যক্তির অন্যতম আইনজীবী পার্থ ঘোষ জানিয়েছেন, কলকাতা পুর আইনের কোথাও প্রশাসক নিয়োগের কোনও সংস্থানের উল্লেখ নেই। রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশনামায় কলকাতা পুর আইনের যে ধারাকে উদ্ধৃত করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে, তাতে আইনের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। পার্থবাবু ব্যখ্যা করে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পুর আইনে প্রশাসক নিয়োগের সংস্থান আছে। কিন্তু কলকাতা পুর আইনে নেই। কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োদের ঘটনা এই প্রথম।’’
আরও পড়ুন: হাজার ছাড়াল বঙ্গের সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত ৭২
শরদকুমার সিংহের আবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসকদের বোর্ডে রয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, যাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ। তার পর কী ভাবে তাঁরা ফের প্রশাসক-বোর্ডে শামিল হলেন? প্রশ্ন করেছেন মামলাকারী। একই ভাবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কী ভাবে নিজেকেই ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করলেন? সেই প্রশ্নও তুলেছেন মামলাকারী। মামলাকারীর আবেদন, সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তিকে বাতিল করা হোক। পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘যদি এই অতিমারির পরিস্থিতিতে বেনজির ভাবে প্রশাসক নিয়োগ করতেই হয়, তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগ না করে সরকারি আধিকারিকরা প্রশাসক হিসাবে কাজ করতে পারেন, পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।” তিনি আরও বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভায় পুর কমিশনার রয়েছেন। তিনি এক জন শীর্ষ আমলা। তাঁকে প্রশাসক রেখেই পুরসভার কাজ চলতে পারে।”
শরদকুমার সিংহের মামলা নথিভুক্ত হলেও এখনও শুনানির দিন ধার্য হয়নি। কোভিডের কারণে কলকাতা হাইকোর্টে ভিডিয়ো কনফেরান্সিংয়ের মাধ্যমে জরুরি মামলার শুনানি হচ্ছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১২ এবং ১৫ মে সেই ভিডিয়ো কনফেরান্সিংয়ের দিন। মামলাকারীর আশা, ওই দু’দিনের যে কোনও এক দিন আদালতে তাঁরা যে আবেদন করছেন তার শুনানি হতে পারে।
কলকাতা পুরসভায় যে প্রক্রিয়ায় প্রশাসক বসানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘মামলা তো সবে একটা হয়েছে, আমার মনে হয় আরও একাধিক মামলা হবে।’’ রাহুল সিংহের কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে ভোটটা হতে পারল না বলে যে বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল, সেই বোর্ডকেই প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হল। গোটা বিষয়টা নিয়ে রাজ্যপালকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হল। এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ তো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেই।’’
আরও পড়ুন:মৃত বেড়ে ৯, বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিকের ঘটনায় অসুস্থ প্রায় ১০০০
কলকাতার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তথা প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ যদিও এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যা করা হয়েছে, তা আইন মেনেই করা হয়েছে। ভারতের যে কোনও নাগরিকেরই আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। যাঁর ইচ্ছা হয়েছে তিনি গিয়েছেন। আদালত আইনানুগ মতামতই দেবে।’’ এই মামলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ দিন নাম না করে বিরোধীদের নিশানা করেছেন অতীন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে পুর পরিষেবাটা সচল রাখা হল সবচেয়ে বড় ইস্যু। কিন্তু এঁরা তার বদলে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করতে চাইছেন। এঁরা এত ধ্বংসাত্মক যে, এই সঙ্কটের সময়েও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারছেন না।’’