পৌরহিত্য

অনলাইনে পৌরহিত্যের পাঠ দিচ্ছেন সোমনাথ

এ বার অনলাইনে পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অন্তত ১০ জন।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শ্যামনগর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৭
Share:

পুরোহিতদের পঠনপাঠন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সদ্য কলেজ পাস দেওয়া প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যের অনেক দিনের ইচ্ছা দুর্গা পুজো করবেন। সে জন্য প্রশিক্ষণ নেবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল কোভিড। শিলিগুড়ি থেকে শ্যামনগর এসে এক মাস ধরে প্রশিক্ষণ নেওয়া এই করোনা আবহে সম্ভব নয়।

Advertisement

কিন্তু প্রযুক্তির হাত ধরে তা সম্ভব হচ্ছে। শিলিগুড়িতে বসেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন প্রসেনজিৎ। শুধু প্রসেনজিৎই নন, এ বার অনলাইনে পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অন্তত ১০ জন। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শ্যানগরের রাহুতা পোড়া কালীতলার বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। গত ১৯ বছর ধরে তিনি নিজের বাড়িতে পুজো করার প্রশিক্ষণ দেন।

অন্যান্য বার তাঁর বাড়িতে এসে প্রশিক্ষণ নেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ৪০-৫০ জন। এ বার মাত্র ২০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তা-ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মাস্ক পরে, দূরত্ব বজায় রেখে। এ ভাবে কোনও দিন প্রশিক্ষণ দিতে হবে, ভাবেননি সোমনাথ।

Advertisement

দীর্ঘ দিন ধরে নিজের বাড়িতেই সংস্কৃত ভাষা প্রসারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান চালান তিনি। সংস্কৃত ভাষা চর্চাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য। সোমনাথ জানান, শুধু ভাষা চর্চাই নয়, অনেকেই এখানে ব্যাকরণ, পুরাণ, কাব্য পাঠের জন্য নিয়মিত আসেন। তবে করোনা আবহে তা বেশ অনিয়মিত।

কিন্তু পুরোহিতদের প্রশিক্ষণের এমন ভাবনা কেন?

সোমনাথ বলেন, “পুজো অনেকেই করেন। কিন্তু তা সব সময় বিধি মেনে নিখুঁত হয় না। দেখতাম অনেকেই বাধ্য হয়ে এই পেশায় এসেছেন। পেটের তাগিদে পুজো করেন। তাঁরা শেখার তেমন কোনও সুযোগ পাননি। সেটা তাঁদের দোষ নয়। সেই থেকে শেখানোর তাগিদটা আসে। যদি মন্ত্রের প্রতিটা শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে অনেকে নিজেরাই নিখুঁত ভাবে পুজো করায় উৎসাহিত হবেন।”

প্রথমে নিজে থেকেই কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সোমনাথ। পরের আরও দু’বছরও তাই করতে হয়েছিল। পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে সোমনাথের প্রশিক্ষণের কথা। তারপর থেকে প্রতি বছরই ছাত্র জুটে যায় তাঁর। সোমনাথ জানান, প্রশিক্ষণ নিতে যাঁরা আসেন, বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। তবে সাধারণ পুরোহিতেরাও আসেন প্রশিক্ষণ নিতে। তার জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না সোমনাথ।

এ বার করোনার দাপটে এবং লকডাউনের জন্য মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল সোমনাথের। লকডাউন শিথিল হতে অনেকেই যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, “কাছাকাছি দূরত্বের যাঁরা তাঁরা আসতে পারবেন। কিন্তু দূরের যাঁরা তাঁদের আসা অনিশ্চিত। বনগাঁ, শ্রীরামপুর, নিউ ব্যারাকপুর, নদিয়ার বিভিন্ন জায়গার ছাত্রেরা তাতে মুষড়ে পড়েছিলেন। সকলের কথা মাথায় রেখে অনলাইনে তালিম দেওয়ার কথা ভাবেন সোমনাথ। জানালেন, প্রযুক্তির দিক থেকে তেমন সড়গড় নন তিনি। তবে অল্প সময়ে রপ্ত করে নিয়েছেন। সোমনাথ আগে মহিলাদেরও প্রশিক্ষণ দিতেন। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, পুজো করতে মহিলাদের তেমন ডাকা হয় না। সোমনাথের আশা, এই বৈষম্য অবশ্যই দূর হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement