Communal harmony

হরিবাসরে শামিল হতে ঘরে ফেরেন নজরুলরা

পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সংখ্যালঘু প্রধান এই ঝিকড়াঘাট এলাকা। মেমারি-মালডাঙা রাজ্য সড়কের ধারে এই গ্রামে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ‘হরিবাসর’ উৎসব।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৮
Share:

মেমারির গ্রামে হরিনামের আসর। ছবি: উদিত সিংহ।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হরিনাম শুনছিলেন আলিয়া বিবি কাজি। তাঁর বাড়ির গা ঘেঁষেই ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। আলিয়া বলেন, ‘‘বছরের এই সময়ে হরিনামের আওয়াজ না পেলে কেমন যেন ফাঁকা লাগে।”

Advertisement

কিছুটা দূরে বাড়ি ডালিম মণ্ডলের। হরিনামে আসা কীর্তন-বাউল শিল্পীদের রাতে থাকার ব্যবস্থা সেখানেই। নিজের হাতে তাঁদের খাবার পরিবেশন করেন ডালিম। কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন নজরুল কাজি। গ্রামে হরিনাম উৎসবের জন্য সেখান থেকে সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। বলছেন, ‘‘এই উৎসব গ্রামের সবার। তাই চলে এসেছি।’’

পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সংখ্যালঘু প্রধান এই ঝিকড়াঘাট এলাকা। মেমারি-মালডাঙা রাজ্য সড়কের ধারে এই গ্রামে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ‘হরিবাসর’ উৎসব। তিন দিনের উৎসবের জন্য কিছু দিন আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে হরিমন্দির সংস্কার করা হয়েছে। ‘ঝিকড়াঘাট হরিবাসর কমিটি’-র সভাপতি সোমনাথ রায় বলছিলেন, ‘‘মন্দির তৈরি করতে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। আবুল হাসান খান, সামসুল শেখরা তখন এগিয়ে এসে সমস্যা মিটিয়েছেন। যে কোনও প্রয়োজনেই ওঁরা পাশে থাকেন।” তিনি যোগ করেন, ‘‘এখন তো মন্দির ঘিরে রাজনীতির চোরাবালি তৈরি হচ্ছে দেশে। আমাদের গ্রাম সেই সব থেকে অনেক দূরে।’’

Advertisement

প্রবীণেরা স্মৃতি খুঁড়ে বলছিলেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে মানুষজন একজোট হয়ে গ্রাম পাহারা দিতেন, যাতে বাইরে থেকে কেউ এসে অশান্তি বাধাতে না পারে। আগামী ২২ জানুয়ারি, রামমন্দির উদ্বোধনের দিনও আলাদা কোনও অনুষ্ঠান হবে না এখানে। বরং গ্রামের মানুষ এখন হরিবাসর নিয়েই মেতে থাকতে চাইছেন।

হরিনামের জন্য গ্রামে এসেছেন বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমের কর্তা আনিসুর মণ্ডলও। তাঁর কথায়, “আমাদের সম্পর্ক খুব পোক্ত। কোনও হাওয়া তাতে ফাটল ধরাতে পারবে না।’’ কীর্তন শোনার ফাঁকে সামজুদা বিবি শেখের দাবি, ‘‘আমাদের নাতি-নাতনিরাও উৎসবের জন্য ভিন্‌ রাজ্য থেকে গ্রামে এসেছে।’’ শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামেই হরিবাসরের জন্য এখন আত্মীয়স্বজনেরা আসেন।

সোমনাথ জানান, হরিনামের কীর্তন, বাউল বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পী খোঁজা থেকে বায়না করা— সব কিছুতেই সঙ্গে থাকেন সামসুলেরা। উৎসব কমিটির সম্পাদক বিষ্টু মাঝি থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ফণীন্দ্রনাথ পাত্রদের কথায়, “হরিমন্দিরের তলায় আমাদের এক সঙ্গে ওঠাবসা।’’ পাশে দাঁড়ানো মফিজুল শেখ বলেন, “এটাই আমাদের ঐতিহ্য।” মেলায় দোকান দিয়েছেন হাবিবুল শেখ, রঞ্জিত পাত্রেরা। তাঁরা জানান, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় মানুষ হরি মন্দিরের সামনে এক বার দাঁড়ান। এটাই এখানকার রীতি।

স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকতা করছেন সঞ্জয় হাজরা। তাঁর মতে, “সব গ্রামেই এই রকম নজির তৈরির প্রয়োজন রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement