বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইন।—ছবি পিটিআই।
রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা মঙ্গলবার কিছুটা বাড়লেও যাত্রীদের হয়রানি পুরোপুরি কমল না। মিনিবাসের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে, তবে প্রত্যাশার তুলনায় অনেকটাই কম। তবে এ দিন পথে সোমবারের তুলনায় দৃশ্যত লোক ছিল কিছুটা কম। তেমনই বাসের ঝক্কি এড়াতে মোটরবাইকে আরও বেশি ভরসা করেছেন অনেকেই। ফলে সকাল ১১টার পরে একাধিক রুটে বাস ছিল কিছুটা ফাঁকা।
এ দিনও অফিসের ব্যস্ত সময়ে হয়রানি মূলত হয়েছে উত্তর শহরতলির যাত্রীদের। সেখান থেকে শহরের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বাস পেতে গিয়ে যাত্রীদের প্রভূত হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পর থেকে বিকল্প রাস্তা এবং মেট্রোর ভরসায় যাতায়াত সহজ হয়েছিল। এখন মেট্রো না-থাকায় এবং বাস, বিশেষত মিনিবাস কম থাকায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। ডানলপের এল-৯ বাসস্ট্যান্ডে সকালের দিকে সাধারণ দিনের তুলনায় অন্তত ৩০টি অতিরিক্ত সরকারি বাস চালাতে হয়। পরে বাড়তি বাস চালাতে হয় বিটি রোড সংলগ্ন চিড়িয়া মোড় থেকেও। উত্তর শহরতলি থেকে ৩সি/১, ২২১, ২১৯ এর মতো একাধিক রুটে বেসরকারি বাস চলেনি। ব্যারাকপুর এবং বারাসতেও বাসস্ট্যান্ডে ভিড় ছিল যাত্রীদের।
পরিস্থিতি সামলাতে এ দিন উত্তর শহরতলির বেশ কিছু রুটে বাসের অস্থায়ী পারমিট দেওয়া হয়েছে পরিবহণ দফতরের তরফে। বেসরকারি বাস ঠিকমতো রাস্তায় নামছে কি না দেখতে এ দিন পরিবহণ দফতরের পরিদর্শক দল যায় বারাসত এবং ব্যারাকপুর বাসস্ট্যান্ডেও। এ দিনও ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর আশ্বাস, ‘‘আজ, বুধবার থেকে আরও কিছু রুট সচল হবে। বাসের সংখ্যা বাড়বে। তবে মিনিবাস নিয়ে সমস্যা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি।’’ সরকারি অফিস চালু হওয়ার প্রায় আট দিন পরেও কেন মিনিবাস চালানো যাচ্ছে না, তার সদুত্তর নেই। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, মিনিবাস মালিকেরা প্রথম থেকেই বলছেন, মিনিবাসে আসন কম থাকায় ক্ষতি অনেক বেশি। ফলে ভাড়া না বাড়লে সমস্যা যে মিটবে না তা স্পষ্ট। ফলে সোমবারের মতো এ দিন বিকেলেও বিবাদী বাগ, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্রসদন, নিউটাউন, সল্টলেক, সেক্টর ফাইভে দীর্ঘ লাইন ছিল ঘরমুখো যাত্রীদের। বেসরকারি বাস এবং মিনিবাসের অভাবে এসপ্ল্যানেড, নিউ মার্কেট, পার্ক সার্কাস, এক্সাইড, গড়িয়াহাট, রুবি মোড়ে রমরমা ছিল শাটল ট্যাক্সির। গড়িয়াহাট, হাজরা, রুবি, কবরডাঙা, বেলেঘাটায় যাত্রীদের কিছুটা সুরাহা দিয়েছে অটো।
আরও পড়ুন: বাসভাড়া চর্চায় ই-১ মডেল
বিভিন্ন অফিস খুলে যাওয়ার পরে সরকারি এবং বেসরকারি বাসের উপরে রেল এবং মেট্রোর অতিরিক্ত ২৭ লক্ষ যাত্রীর চাপ এসে পড়ছে বলে আগেই জানিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তবে বেসরকারি বাস কম চলায় এবং মিনিবাস নামমাত্র চলায় সমস্যা কমছে না। সামগ্রিক ভাবে অফিসের সময়ে উল্টোডাঙা, শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক, চিনার পার্ক, রবীন্দ্রসদন, রাসবিহারী, রুবি, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাটের মতো জায়গায় ছিল যাত্রীদের ভিড়। রুবি মোড়ে একাধিক বাস থেকে পুলিশকে বাড়তি যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ড কি দখল করেছে চিন?’ রাজনাথকে প্রশ্ন রাহুলের
এয়ারপোর্ট ১ নম্বরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিউটাউন যাব। কিন্ত আধ ঘণ্টা ধরে একের পর এক বাস ভর্তি হয়ে আসায় উঠতে পারছি না। ’’ আবার বেলা দেড়টায় রুবি মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা সঞ্জয় কর্মকার বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি যাব। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি।’’ প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পরে তিনি বাসে ওঠার সুযোগ পান।