Mahananda River

‘সব ভাসাচ্ছিল নদী, নথি বাঁচাব না প্রাণ?’

অনেকে বলছেন, ‘‘নদী তো সব নিয়েছে। দেশটুকু ছিল। এ বার কি সেটাও হারাতে হবে?’’

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা 

সূর্যাপুর  শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৮
Share:

প্লাবন: সূর্যাপুরে মহানন্দার বন্যা। ফাইল চিত্র

ভিটেমাটি গিলেছে মহানন্দা। গিলেছে অন্য সব কিছু, পরিচয়ের নথিও।

Advertisement

নদীর গ্রাসে সব হারিয়ে উত্তর দিনাজপুরের বিহার সীমানার গোয়ালপোখর ২ ব্লকের সূর্যাপুরের শিমুলিয়া, ডালটন, বস্তাডাঙ্গি, উত্তর ডালটন, সৈয়দপুর-সহ ১০টি গ্রামের মানুষ অসহায়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের খবরে তার সঙ্গে জুড়েছে আতঙ্কও।

অনেকে বলছেন, ‘‘নদী তো সব নিয়েছে। দেশটুকু ছিল। এ বার কি সেটাও হারাতে হবে?’’

Advertisement

এলাকাবাসী জানান, মহানন্দার তীর লাগোয়া গ্রামে নদীভাঙনে কয়েকজন হারিয়েছেন ভিটেমাটি। বাড়ির সঙ্গে গিয়েছে নথিও। চিন্তা তা নিয়েই। তাঁদের কেউ কেউ নতুন ভোটার কার্ড পেলেও, মেলেনি আধার কার্ড।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে বর্ষায় আচমকা মহানন্দা উপচে এই এলাকার বিস্তীর্ণ প্রান্তর প্লাবিত হয়। ভেসে যায় অনেক বাড়ি। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই ক্ষত এখনও পুরোপুরি মেটেনি। নতুন করে অনেকে অন্য জমিতে বাড়ি গড়েছেন। নতুন ভাবে ফিরেছেন রোজনামচায়। এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, ঠিক তখনই নতুন নাগরিকত্ব আইনের খবরে ফের আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভিটে-জমি, এমনকি দেশ হারানোর।

এলাকাবাসী হাবিব আলম জানান, মহানন্দার জলে এত স্রোত ছিল যে তা জাতীয় সড়কে পৌঁছে গিয়েছিল। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। রেললাইনে জল জমে গিয়েছিল। জাতীয় সড়কের পাশে স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সবাইকে। তাঁর কথায়, ‘‘তখন প্রাণ বাঁচানোই বড় ছিল। নথির দিকে কেউ তাকাতে পারিনি।’’

টিটিয়া গ্রামের রফিক আলমের কথায়, ‘‘গ্রামে ২৪০টি ঘর রয়েছে। দেড়শো পরিবারকে নদীর পাশ থেকে সরে যেতে হয়েছে। কারও ঘর গিয়েছে, কারও চাষের জমি। তাতে কেউ হয়েছে দিনমজুর, কেউ কাজের খোঁজে গিয়েছে বাইরে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীর ধার বরাবর বাঁধ সংস্কারের কাজ হয়েছে। কিন্ত ‘আগ্রাসী’ মহানন্দায় লাগাম পরানো যায়নি।

কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক মহম্মদ মুস্তফা বলেন, ‘‘নদী বাস্তভিটে, ধানজমি পাশাপাশি গিলে খেয়েছে নথিও। নতুন আইনের খবর পেয়ে তা-ই সকলে ভয়ে রয়েছেন।’’

বস্তাডাঙ্গি গ্রামের হাবিবা বিবির চোখের সামনে তাঁর বাড়ি, জমি ভাসিয়েছে মহানন্দা। তিনি বলছেন, ‘‘প্রাণ বাঁচাতে তখন পালিয়েছি। নথির কথা মনেই আসেনি।’’

সূর্যাপুর ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাবেরা খাতুন জানান, তিন বছর আগে এই এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। মহানন্দার বাঁধ ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। অনেক নথিও ভেসে যায়। ওই সমস্ত এলাকার মানুষ পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে ভিড় করছেন পুরনো নথি ফিরে পেতে। পঞ্চায়েত থেকে তাঁদের সাহায্য করা হবে। একই বক্তব্য গোয়ালপোখর ২ ব্লকের বিডিও কানাইয়াকুমার রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের সাহায্য করবে প্রশাসন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement