প্রতীকী ছবি।
শনিবার বিকেলের উড়ানেই কেরলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মইনুল মণ্ডলের। লকডাউনে বাড়ি এসে, যাচ্ছি-যাব করেও গ্রামের মায়া যেন কাটিয়ে উঠতে পারছিল না! ক’দিন আগেও পাড়া-পড়শির টিপ্পনী শুনতে হয়েছে তাকে— ‘কী মইনুল, গ্রামে যে শিকড় গাড়লে দ্যাখতেসি, কেরল যাইবার মন নাই বুঝি!’ সেই মইনুলকেই শুক্রবার রাতে গ্রাম থেকে একেবারে ‘উপড়ে’ নিয়ে গিয়েছে এনআইএ। তার পাশের বাড়ির প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘যে ভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, মনে হল একটা ভাঙা গাছকে উপড়ে নিয়ে যাচ্ছে!’’ দাওয়ার ভাঙা বাঁশে ঠেস দিয়ে মইনুলের স্ত্রী মার্তজা বিবি বিড়বিড় করছেন, ‘‘আমিই তো বার বার আটকেছি। হয়তো কেরলে ফিরে গেলে এমন অকারণে গ্রেফতার করে নিয়ে যেত না ওকে!’’ মাস কয়েক আগে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনা হয়েছে বাড়িতে। মার্তজার দাবি, নতুন ফোনে সড়গড়ই হয়নি মানুষটা। অথচ এনআইএ’র দাবি, ওই ফোনেই লুকিয়ে আছে যাবতীয় গোপন ‘তথ্য’।
আল মামুন কামাল বছর দু’য়েক ধরে কেরল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কামাল এখন ঠিকাদারির কাজ করেন। তার যে বেশ প্রতিপত্তি হয়েছে বাড়িতে নতুন কেনা টিভি-ইলেকট্রিক ইস্ত্রি তার নমুনা। গ্রামবাসীরা জানান, মাঝে মধ্যে ট্রাক চালাত কামাল। তবে, খুব দূরে কোথাও তাঁকে যেতে তাঁরা দেখেননি। কামালের বাবা ফরজ আলি বলেন, ‘‘বাড়িতে রাজমিস্ত্রির ছেনি-হাতুড়ি ছাড়া কিছুই নেই। তা নিয়ে গিয়ে এখন এনআইএ বলছে, অস্ত্র মিলেছে!’’
গ্রেফতার করা হয়েছে আবু সুফিয়ান নামে এক মাঝ বয়সীকেও। পেশায় দর্জি আবুর তেমন পসার ছিল না বলেই গ্রামের লোকজনের দাবি। তার বাবা সীমান্তের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সুফিয়ানের এক দাদাও রানিনগরের একটি স্কুলের শিক্ষক। সুফিয়ান অবশ্য মাধ্যমিক পাশ করে দর্জির কাজ শুরু করেন।
মুর্শিদাবাদের ডোমকল ব্লকের সীমান্ত ছোঁয়া একের পর এক গ্রাম, মধুবোনা, নওদাপাড়া, কালীনগর। শুক্রবার রাতে সেই সব গ্রামেই এনআইএ-র কনভয় পৌঁছয়। একের পর এক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। মইনুল, সুফিয়ানের বাড়ির লোকজন জানান, ঢুকেই একটি টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে এনআইএ-র কর্মীরা বলতে থাকেন, ‘‘শোনো, তোমাদের বাড়ির লোক কাদের সঙ্গে কথা বলে... কী ষড়যন্ত্র করছে।’’ মিনিট দশেকের মধ্যেই ‘অপারেশন’ শেষ করে ফেলে তারা। তার পরে নিমেষে উধাও হয়ে যায়।