ফাইল চিত্র
বাড়তি প্রায় কিছুই নেই। না উপচে পড়া ভিড়, না থিমের বাহার, না আলোর চমক, না নিজস্বী তোলার ধুম, না রেস্তরাঁয় লম্বা লাইন। ১৩টি মণ্ডপে প্রতিমাও নেই। বাদ যাচ্ছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা।
করোনা আবহে এক অন্য জগদ্ধাত্রী পুজো উদ্যাপন করছে চন্দননগর। আড়ম্বরবর্জিত।
তিন দিক খোলা মণ্ডপে সালঙ্কারা প্রতিমা আছেন। কিন্তু দর্শকের প্রবেশ নিষেধ। বেশিরভাগ মণ্ডপে দড়ি-ফিতের ঘেরাটোপ। ভিতরে করোনার সতর্কবার্তা। আদি হালদারপাড়ার মতো অনেক মণ্ডপে আবার স্যানিটাইজ়ার গেট। মণ্ডপের পাঁচ মিটার দূর থেকে প্রতিমা দেখতে হচ্ছে সকলকে। তাঁরা হতাশ হচ্ছেন। কিন্তু মেনে নিচ্ছেন। মণ্ডপের ভিতরে যেতে পারছেন শুধু পুজো কমিটির লোকজন এবং ঢাকিরা।
‘‘কী আর করব, মেনে তো নিতেই হবে। সারা বছর পুজোর এই চারটে দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। এ বার এমন রোগ এল, সব ওলটপালট করে দিল। জীবনে এমন ভাবে পুজো হতে কখনও দেখিনি।’’— বলছেন বাগবাজারের বছর পঁচাশির বেলা শীল। তাঁর বাড়ির সামনেই স্টেশন রোড। একটু এগোলেই জিটি রোড। অন্যান্য বার পঞ্চমীর বিকেল থেকেই দুই রাস্তায় গিজগিজ করে কালো মাথা। এ বার অষ্টমীর রাতেও সেই ভিড় নেই। অস্থায়ী খাবারের দোকান বসেছে হাতোগোনা।
‘চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি’র অধীনে এ বার মোট ১৭১টি (ভদ্রেশ্বরের পুজো মিলিয়ে) পূজো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩টি পুজো কমিটি আজ, মহানবমীতে ঘটপুজো করবে। বিশেষ জয়ন্তী বর্ষ রয়েছে ১০টি পুজো কমিটির। সাধারণত, জয়ন্তী বর্ষের পুজোতে এবং তার বিসর্জনে বাড়তি আয়োজন থাকে। এ বার সব কমিটিই তা বাদ দিয়েছে। ৫০তম বছরে পড়া বৈদপোঁতা সর্বজনীনের সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষাল বলেন, ‘‘অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিছুই হল না। আসছে বছর রোগমুক্তি ঘটলে না হয় মাতামাতি করা যাবে।’’
দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেই জগদ্ধাত্রী পুজো কী ভাবে হবে, তা নিয়ে শহরময় শুরু হয়ে গিয়েছিল জল্পনা। নড়ে বসেছিল চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন। শেষমেশ পুজোতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাদ যায় নবমীর ভোগ বিলি, দশমীর দেবীবরণ এবং বিসর্জনের শোভাযাত্রা। পুষ্পাঞ্জলিতে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। মাস্কহীন অবস্থায় রাস্তায় ঘুরলে গ্রেফতারিরও নির্দেশ দেয় প্রশাসন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পুজো কমিটিও দফায় দফায় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতির কথা সব পুজো উদ্যোক্তাই বুঝেছেন। পুজো আয়োজনে সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন তাঁরা।’’ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধরণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের পুজোকে এ ভাবে দেখে অনেকেরই মন মানছে না। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ ‘আলোর শহরে’ এ বার আলোর বাহার নেই। তবে, পুজোর আয়োজনে বেশির ভাগ কমিটিই সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে।