সৌরভের বাবা ও মা। চন্দ্রকোনার বাড়িতে শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। ভাল ছাত্র বলে পরিচিত। ছোট থেকেই অঙ্কে ভাল। সেই অঙ্কের জোরেই যাদবপুরে পড়তে গিয়েছিলেন সৌরভ চৌধুরী। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সেই ছেলেই মফস্সলের আর একটি ছেলের অপমৃত্যুতে গ্রেফতার হয়ে গেলেন! অঙ্কটা মেলাতে পারছেন না সৌরভের পরিবার, পড়শি থেকে স্কুল শিক্ষকেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রাম খারুষা। ঝাঁকরা বাজারের খানিক আগে মূল সড়ক থেকে দু’কিলোমিটার ঢুকে সেখানে পৌঁছতে হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুতে ধৃত সৌরভ এই গ্রামেরই ছেলে। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা স্থানীয় টেনপুর থাকময়ী বিদ্যাপীঠে। টিচার ইনচার্জ অসীম সেনাপতি জানালেন, “সৌরভ আমাদের স্কুল থেকে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল। দু’বছর আগেও স্কুলের সরস্বতী পুজোয় এসেছিল। সে এমন কাণ্ড ঘটাল!”
২০১৪ সালে মাধ্যমিক পাশের পরে মেদিনীপুর শহরে চলে যান সৌরভ। কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেন। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে গণিতে অনার্স নিয়ে মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হন তিনি। তবে পড়া শেষ করেননি। প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষাতেও বসেননি। অঙ্ক নিয়েই পড়তে চলে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২২-এ স্নাতকোত্তর। তার পরেও অবশ্য হস্টেলেই থাকতেন সৌরভ। সেখানে থেকেই সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ছোট থেকে আর্থিক অনটনের সঙ্গে যুঝেছেন সৌরভ। বাবা নিরূপ চৌধুরী টিউশন করেন। আর সামান্য জমিজমা আছে। নিরূপ আর তাঁর স্ত্রী প্রণতি চৌধুরী জানালেন, তাঁরা কষ্ট করেই ছেলেকে বড় করেছেন। খারুষা গ্রামে চৌধুরী পরিবারের বাড়িটিও বেশ জীর্ণ। ওই বাড়িতেই সৌরভের কাকা-জেঠারাও থাকেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় টিভি দেখে পরিবার জানতে পারে পুরো বিষয়টি। তবে গ্রেফতারের আগে মাকে ফোন করেছিলেন সৌরভ। দাবি করেছিলেন, তাঁর কিছু হবে না।
সৌরভের কাকিমা বন্দনা চৌধুরী বললেন, “দিদিকে (প্রণতি) ফোনে বুড্ডা (সৌরভের ডাকনাম) বলেছিল, ও কিছুই জানে না। তদন্তে নিশ্চয়ই সত্যিটা উঠে আসবে।” শনিবার সকালেই সস্ত্রীক কলকাতা গিয়েছেন নিরূপ। ফোনে বলেন, “ছেলের খবর শুনেই আমরা চলে এসেছি। বাবা হিসেবে আমার আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে।” সৌরভের কাকা নিশীথ চৌধুরী বলেন, “ওর ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কী যে করল, বুঝছি না।”
সৌরভের গৃহশিক্ষক ছিলেন পড়শি বিশ্বজিৎ মঙ্গল। তিনি বলেন, ‘‘ভাল ছাত্র ছিল। করোনার সময় গ্রামে এসে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার দিয়েছিল সবাইকে।” স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তা খামরুই, আশিস চৌধুরীরাও বলছিলেন, “অনেক কষ্ট করে ওকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন বাবা, মা। কী যে হয়ে গেল!’’