R G Kar Hospital Incident

পথে বাম, ‘বিচার’ চেয়ে মিছিলে সুর মিলল জনতার

আর জি কর-কাণ্ডে ন্যায়-বিচার এবং পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাজাবাজার থেকে ‘মহামিছিলে’র ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৫
Share:

বামফ্রন্টের মহামিছিল। মঙ্গলবার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

অরাজনৈতিক প্রতিবাদের আবহেই এক অন্য রকম মিছিল দেখল কলকাতা। রাজনৈতিক আহ্বানে রাজনীতির পতাকা নিয়ে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল যে মিছিল। মোড়ে মোড়ে, দোকান-বাজার থেকে, রাস্তার ধারের বাড়ির বারান্দা থেকে যে মিছিলের সঙ্গে স্লোগানে গলা মেলালেন মানুষ। রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক চেহারাকে মিলিয়ে দিল ‘বিচার চাই’-এর দাবি! বামফ্রন্টের ডাকা মিছিল আক্ষরিক অর্থেই রাস্তা ছাপিয়ে গেল!

Advertisement

আর জি কর-কাণ্ডে ন্যায়-বিচার এবং পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাজাবাজার থেকে ‘মহামিছিলে’র ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট। সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির কনীনিকা ঘোষ, সোমা দাস, শ্রমিক সংগঠনের গার্গী চট্টোপাধ্যায়েরা ছিলেন মিছিলের সামনে। শামিল হয়েছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী এবং বাম শরিক দলের রাজ্য নেতৃত্ব। শুরু থেকেই মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মানিকতলায় ব্যারিকেড করে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু বাম জনতার ধাক্কায় ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। আর জি কর হাসপাতাল পর্যন্ত অবশ্য মিছিলকে যেতে দেওয়া হয়নি। শ্যামবাজারেই বিক্ষোভ-সভা করেছেন বাম নেতৃত্ব। ভিড়ে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল পাঁচ মাথার মোড়। রাত পর্যন্ত শ্যামবাজারেই অবস্থানে বসেছিলেন মীনাক্ষীরা।

বামফ্রন্টের মিছিলে অবরুদ্ধ রাজপথ। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল যত এগিয়েছে এ দিন, আশেপাশের মানুষকেও এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। হরিশা মার্কেট বা খন্নার মোড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত-সহ নানা অংশের মুখ মিছিলের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন। রাস্তা দিয়ে যখন মিছিল যাচ্ছে, উপরে বাড়ির বারান্দা বা ছাদ থেকেও বাসিন্দারা ‘বিচার চাই’ ধ্বনি তুলেছেন। বাম নেতৃত্বের মতে, সাম্প্রতিক কালে কোনও কর্মসূচিতে তাঁরা এমন ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সমর্থন পাননি। টানা আন্দোলনের পথে থাকার ঘোষণাও করেছেন তাঁরা।

Advertisement

মিছিল শেষে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘জনতাকে জেগে থাকতে হবে। দোষীদের কঠিন শাস্তি আদায় করে আনতে হবে। বিচারের প্রক্রিয়া যারা আটকাচ্ছে, তাদেরকে চিনে নিতে হবে। সবাইকে শাস্তি দিতে হবে। না হলে আন্দোলন চলবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিধানসভা হোক বা সংসদ, যারা অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারে না, তাদের অপেক্ষায় না-থেকে তখন বিচার ছিনিয়ে আনতে হয়। আমরা বিচার ছিনিয়ে আনতে এসেছি!’’

কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েলের অপসারণের দাবিও উঠেছে মিছিল থেকে। কামদুনি, মধ্যমগ্রাম, হাঁসখালি-সহ নানা ধর্ষণের ঘটনায় বিচার না পাওয়ার অভিযোগ করে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার কাজ করেছেন পুলিশমন্ত্রীর নির্দেশে। কেন পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইব না? আর যাঁরা ভাবছেন ব্যারিকেড করে আটকে দেবেন, তাঁরা মনে রাখবেন রাস্তা কারও একার নয়, একটাও নয়! ব্যারিকেড করে কত রাস্তা আটকাবেন?’’ সেলিমের মতে, ‘‘লড়াই পুলিশের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু পুলিশ এখানে প্রমাণ আড়াল করেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আইন দেখাচ্ছেন!’’ সেই সঙ্গেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘প্রতি দিন মানুষ রাত জাগছেন, পথে নামছেন। যারা এই প্রতিবাদে, আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের লাল সেলাম!’’

কলেজ স্ট্রিট থেকে এ দিনই শ্যামবাজার মোড় পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল ছাত্র সংগঠন ডিএসও। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ুয়ারা এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। ‘সেটিং ছেড়ে বিচার দাও, নইলে সিবিআই ফিরে যাও’— এই স্লোগান সামনে রেখে আজ, বুধবার নিজ়াম প্যালেস অভিযানের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। অ্যাকাডেমির সামনে জমায়েত করে মিছিল এগোবে নিজ়াম প্যালেসের দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement