জ়োম্যাটোর সিইও তথা সহ-প্রতিষ্ঠাতা দীপেন্দ্র গয়াল। ছবি: সংগৃহীত।
‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসাবে চাকরি দেওয়ার জন্য ২০ লক্ষ টাকা নেওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর ছিল না। সঠিক প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য ‘ফিল্টার’ হিসাবে বিজ্ঞাপনে ওই কথা লেখা হয়েছিল। জ়োম্যাটোয় চাকরির বিতর্কিত বিজ্ঞাপন নিয়ে সুর পাল্টালেন সংস্থার সিইও তথা সহ-প্রতিষ্ঠাতা দীপেন্দ্র গয়াল। গয়াল জানিয়েছেন, চাকরির সুযোগ দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলিকে টাকা দেওয়া বিষয়টি যেন কোনও ভাবেই একটি অভ্যাসে পরিণত না হয়। পাশাপাশি, তাঁদের সংস্থায় ‘চিফ অফ স্টাফ’ পদে ওই চাকরির জন্য মোট ১৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে গয়াল বলেন, ‘‘চাকরির ওই বিজ্ঞাপন কোনও সাধারণ বিজ্ঞাপন ছিল না। আমাদের বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু মানুষ বলছেন যে, চাকরির জন্য আমাদের ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এটা ঠিক নয়। এটা নিছকই একটি ফিল্টার ছিল। এই ফিল্টার দেওয়া হয়েছিল এমন প্রার্থীদের খুঁজে বার করার জন্য যাঁরা, কোনটা ভাল কেরিয়ারের সুযোগ তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখেন। আর তাই তাঁদের সামনে সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছিল।’’
জ়োম্যাটোর সিইও আরও বলেন, ‘‘যাঁরা টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ আবেদনই আমরা প্রত্যাখ্যান করতে চলেছি। আমরা যে আবেদনগুলি পেয়েছি তার থেকে প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং শেখার মানসিকতা রয়েছে, এমন প্রার্থীদের খুঁজে বার করা হবে।’’
তাঁর সঙ্গে এক জন এক্স ব্যবহারকারীর কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করে গয়াল আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে, শেষ পর্যন্ত কারও থেকেই ২০ লক্ষ টাকা নেওয়া হত না এবং চাকরি পাওয়ার পর কর্মীকে বিনা বেতনে কাজও করানো হত না। গয়াল যোগ করেছেন, ‘‘জীবনে চলার জন্য টাকা অপরিহার্য এবং আমি বাজারের চেয়ে বেশি বেতন দেওয়ায় বিশ্বাস করি।’’
যদিও অনেকেই মনে করছেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েই রাতারাতি বয়ান বদলাতে হয়েছে জ়োম্যাটো-কর্তাকে।
বিতর্কের সূত্রপাত বুধবার। ওই দিন এক্স হ্যান্ডলে সংস্থার জন্য ‘চিফ অফ স্টাফ’ চেয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন গয়াল। সেই বিজ্ঞাপনে তিনি জানান, সংস্থার জন্য এক জন যোগ্য ‘চিফ অফ স্টাফ’ খুঁজছেন তাঁরা। তবে চাকরি করলেও প্রথম বছর বেতন হিসাবে এক টাকাও পাবেন না সেই কর্মী। উল্টে পকেট থেকে দান হিসাবে জ়োম্যাটোর দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তবে জ়োম্যাটোও কিপটেমি করবে না। ওই কর্মীর কোনও পছন্দসই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সংস্থার তরফে ৫০ লক্ষ টাকা দান করা হবে, যা এক জন ‘চিফ অফ স্টাফ’-এর এক বছরের বেতনের সমান। দ্বিতীয় বছরের শুরু থেকে ওই কর্মীকে বেতন দেওয়া শুরু করবে জ়োম্যাটো। তবে বেতনের সেই অঙ্ক অবশ্যই ৫০ লক্ষের বেশি হবে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে যায়। অনেকেই দাবি তোলেন, জ়োম্যাটো যে ভাবে চাকরির বিনিময়ে টাকা তুলছে তা শ্রম আইন ভাঙার শামিল। প্রশ্ন ওঠে, কত জনের পকেটের এত জোর আছে যে তাঁরা চাকরির জন্য ২০ লক্ষ টাকা দান করতে পারবেন? তবে নেটাগরিকদের একাংশের মতে, নিছকই প্রচারের আলোয় আসার জন্য এবং নিজেদের ‘মহৎ’ প্রমাণ করতেই এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার তরফে। যদিও শুক্রবার পুরো বিষয়টি নিয়ে নয়া যুক্তি দিয়েছেন গয়াল। জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার বদলে টাকা না নেওয়ার ‘ইচ্ছা’র কথাও।