সেই কুমির। সাধুগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র।
ত্রৈলক্যনাথের লেখায় ডমরুধরের দেখা কুমির খেজুর গাছের মতো নদীতে ভেসে বেড়াত, আস্ত গরু-মোষ গিলে ফেলত! কয়েক দিনে মানুষের মুখে-মুখে গল্পগাছায় নদিয়ার কালীগঞ্জের কুমিরও প্রায় সে রকমই ভয়ানক প্রাণীতে পরিণত হয়েছে!
মিষ্টি জলের নেহাতই সাধারণ সে কুমির ভাগীরথীর বাঁকে-বাঁকে আপন খেয়ালে মুর্শিদাবাদ থেকে নদিয়ায় সাঁতরে এসেছিল। কারও ক্ষতিও করেনি। কিন্তু তাতে কী! প্রথমে বহরমপুরে তার পর কালীগঞ্জে কখনও নদীর জলে, আবার কখনও শুকনো পাড়ে তার দেখা মেলার পর থেকে মানুষের ত্রাসের শেষ নেই। কেউ বলছেন, তার পিঠে নাকি মস্ত সব কাঁটা! কারও কথায়, ‘‘হাঁ খানা এত বড়, না দেখলে বিশ্বাস হয় না।’ কেউ তার নাকের ডগা দেখেছেন, কেউ লেজ। তার পর আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে তার বর্ণনা দিচ্ছেন। ফলে নদিয়ার কালীগঞ্জের বহু লোক আতঙ্কে নদীতে স্নান করা বা বাস ধোওয়া-কাপড় কাচার মতো কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন! কালীপুজো ও অমাবস্যা উপলক্ষে ভাগীরথীতে স্নান করার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু কুমিরাতঙ্কে সেটাও অধিকাংশ লোক করেননি। বন দফতরের এখন একটাই উদ্দেশ্য, অহেতুক আতঙ্কে কেউ যাতে কুমিরটির ক্ষতি না-করেন তা দেখা। এ ব্যাপারে এলাকায় প্রচারও চালাচ্ছে তারা। এবং জানিয়ে দিয়েছে, কুমিরকে জল থেকে তোলার প্রশ্নই নেই।
গত শুক্রবার কুমিরটিকে দেখা গিয়েছিল পলাশি তেজনগর ঘাটে, তার পর মানিকডিঢি ঘাটে ও শেষে কালীগঞ্জের ফুলবাগান এলাকার চরে। শনিবার সারা দিন সে নজরে আসেনি। নজরদারি চালাচ্ছিল বন দফতর। রবিবার কিছু মৎস্যজীবীর চোখে পড়ে, কুমিরটি সাধুগঞ্জের চর এলাকায় রোদে গা শুকোচ্ছে।
কালীগঞ্জের পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য গনেশ চৌধুরীর বলেন, ‘‘কেউ যেন তাকে আঘাত না করেন সেই দিকে আমরাও নজর রাখছি।’’ নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার বন দফতরের আধিকারিক প্রদীপ বারুইয়ের কথায়, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য, কুমিরটিকে রক্ষা করা। মানুষের কাছে আবেদন, ওকে স্বাভাবিক ভাবে থাকতে দিন এবং ওকে দেখতে পেলে কাছে যাবেন না।’’