আর নয় নোট বদল। নোটিস ঝুলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গেটে। মঙ্গলবার দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
• মাস দেড়েক আগে দাদা মারা গিয়েছেন। তার পর থেকেই বৌদি অসুস্থ। গত রবিবার বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে দাদার আলমারিতে পাঁচশো আর হাজারের পুরনো নোট মিলিয়ে মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা পান খড়্গপুরের বাসিন্দা শক্তিপদ ভট্টাচার্য। নোট বদলে নিতে মঙ্গলবার সকালে খড়্গপুর থেকে কলকাতায় এসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাঙ্কের গেটে নোটিস লটকানো: বাতিল হওয়া নোট আর বদলানো যাবে না। তবু আশায় আশায় বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন শক্তিবাবু। কিন্তু আশা পূরণ হয়নি।
• তারকেশ্বরের ডাককর্মী সোমনাথ মাইতির মাতৃবিয়োগ হয়েছে সম্প্রতি। আলমারিতে মায়ের শাড়ির ভাঁজে রাখা পাঁচশো টাকার পুরনো নোটে চার হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। সোমবার স্থানীয় ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন সেই নোট জমা দিতে। ব্যাঙ্ক তা নেয়নি। টাকা বদলের শেষ আশায় এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে পৌঁছে যান সোমনাথবাবু। কিন্তু সেখানেও তাঁর নোট বদল হয়নি।
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভোজেরহাটের বাসিন্দা আব্দুল জব্বরের শ্বশুরমশাই হজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। শেষকৃত্যের পরে জানা যায়, পুরনো নোটে ৫৮ হাজার টাকা রয়ে গিয়েছে তাঁর। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে সেই সব নোট বদলাতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হল জব্বরসাহেবকেও।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে উদ্বিগ্ন মানুষের জটলা ছিল সারা দিনই। বেশির ভাগের কাছেই দু’চার হাজার টাকার বাতিল নোট। অপর্ণা পাত্র এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে। সেখানকারই এক নার্সিংহোমে সামান্য টাকায় আয়ার কাজ করেন। এত দিন ওই টাকা বদলে নেননি কেন? অপর্ণা বলেন, ‘‘আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। এত দিন কোনও রকমে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। শেষে ওই টাকাটা আর বদল করতে পারছি না। পড়শিরা বলল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কে যেতে হবে। তাই এসেছি।’’
ভিড়ে উদ্বেগের মধ্যে ঝাঁঝালো সুরও শোনা গেল বারবার। ক্ষুব্ধ মানুষজন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হঠাৎ হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলের নিন্দায় মুখর। তাঁদের প্রশ্ন, মোদী তো বলেছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরনো নোট বদল করা যাবে। হঠাৎ সেই সিদ্ধান্ত বদল গেল কেন? কারও কারও ক্ষোভ, ‘কালো টাকার কারবারিরা এতে কত দূর জব্দ হল, জানি না, কিন্তু আমাদের মতো ছাপোষা মানুষের যে চূড়ান্ত হয়রানি হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’
জীবন বিমা (এলআইসি)-র এজেন্ট রেশমী চৌধুরীর অভিযোগ, পাঁচশো টাকার মাত্র একটি নোট বদলে নিতে ৩০ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কে এসেছিলেন তিনি। তখন তাঁকে বলা হয়, মঙ্গলবার আসতে হবে। কিন্তু এ দিন পৌঁছে দেখেন, নোটিস লটকে দেওয়া হয়েছে গেটে।
নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানির প্রতিবাদে এ দিনই কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ দেখায় হকার সংগ্রাম কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় মুহুর্মুহু স্লোগান দেওয়া হয় সেই জমায়েতে। হকার সংগ্রাম কমিটির তরফে ডেপুটেশনও দেওয়া হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের কাছে।