খাদ্যপণ্যের পাইকারি দর যে গতিতে বেড়েছে, তাতে খুচরো বিক্রিতে আজ নয়তো কাল তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
গত মাসে ফের ৬ শতাংশের উপরে (৬.২১%) মাথা তুলেছে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি। উদ্বেগ বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধির হার চড়ল পাইকারি বাজারেও। কারণ একই, খাদ্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দর।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবরের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি উঠেছে ২.৩৬ শতাংশে। চার মাসে সর্বোচ্চ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এমনিতে এই হার খুব বেশি নয়। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল, তার ঊর্ধ্বগতি জরুরি কিছু খাদ্যপণ্যের সৌজন্যে। সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ছিল ১১.৫৩%। গত মাসে বেড়ে ১৩.৫৪% হয়েছে। শুধু আনাজেরই ৬৩.০৪%। আলুর প্রায় ৭৯%, পেঁয়াজের ৩৯.২৫%। ফল, ডাল, ধান, গমের মতো খাবারের দামও বেড়েছে। খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল ১০.৮৭%। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনিতে পাইকারি দামের সঙ্গে সাধারণ ক্রেতার সরাসরি সম্পর্ক নেই। কিন্তু খাদ্যপণ্যের পাইকারি দর যে গতিতে বেড়েছে, তাতে খুচরো বিক্রিতে আজ নয়তো কাল তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তখন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
দাম কমার আশায় সকলেই খরিফ এবং রবি শস্যের দিকে তাকিয়ে। খরিফ মরসুমের ফসল এই মাস থেকে বাজারে আসার কথা। রবি ফসল মিলবে এপ্রিল থেকে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হিসাব কষার ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্যের গুরুত্ব খুচরো বাজারের মতো অত বেশি নয়। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার অর্থনীতিবিদ রাহুল আগরওয়ালের দাবি, তবু একক ভাবে শুধু খাদ্যপণ্যের চড়া দরই এক মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিকে ৬৩ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকও মেনেছে সেই কথা।
পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক বলেন, “বেশ কিছু এলাকায় বন্যায় চাষবাস মার খেয়েছে। টাকার দাম কমায় আমদানিকৃত অনেক খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে।’’ তবে অর্থনীতিবিদ সুমন মুখেপাধ্যায় এর পিছনে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি দেখছেন। তাঁর কথায়, “কয়েকজনকে পাইয়ে দেওয়াই লক্ষ্য। জোগান বা উৎপাদনে সমস্যার কথা তেমন শোনা যাচ্ছে না। তা হলে সমস্যা রয়েছে কালোবাজারি ও বেআইনি মজুতে। ইচ্ছে করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।” তিনি জানান, খাদ্যপণ্যের মধ্যেও যেগুলি ‘লাক্সারি গুডস’ (দামি), সেগুলি তেমন বাড়েনি। যেমন— মুরগির মাংস, পনির। অথচ আলু, পেঁয়াজ, রসুনের মতো পণ্য আগুন। এগুলিকে বলে ‘ওয়েজ গুডস’। যা নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং সব শ্রেণির মানুষই কেনেন।