সমস্যায় বাসিন্দারা ফাইল চিত্র
সরকার দুয়ারে আসতে পারেনি। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের পিরোজপুর চর ও বাজিতপুর চর থেকে ৯ কিলোমিটার ভরা পদ্মা পেরিয়ে বড় শিমুল পঞ্চায়েত অফিসে যেতে হচ্ছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের জন্য। এই জেলারই জলঙ্গির উদয়নগর খণ্ড ও পরাশপুর চরের মানুষকেও আসতে হয়েছে কয়েক কিমি দূরে ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। পদ্মার জল ঢুকে ওই দুই গ্রামেরও অনেক বাড়ি জলমগ্ন। চর পরাশপুরের বাসিন্দা শব্দুল মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের দুয়ারে কেউ পৌঁছয়নি এত দিনেও। সামান্য কোনও পরিষেবা পেতে গেলেও আমাদেরই যেতে হয় সরকারের দুয়ারে।’’
প্রশাসনের দাবি, এই গ্রামগুলোয় কোথাও বিদ্যুৎ নেই, কোথাও ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকেও না থাকারই মতো। তাই শিবির বসাতে হয়েছে দূরে। মুর্শিদাবাদেরই বাসিন্দা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান বলছেন,“এ রকম বহু গ্রাম রয়েছে, যেখান থেকে দুয়ারে সরকার হচ্ছে ন’দশ কিলোমিটার দূরে। পিরোজপুর ও বাজিতপুরে বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট ব্যবস্থাও ভাল নয়।” তাঁর বক্তব্য, “ওই দুই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তবে সময় লাগবে।”
সীমান্ত লাগোয়া পিরোজপুর, বাজিতপুরে প্রায় হাজার দেড়েক পরিবারের বাস। ঘর বলতে বেশির ভাগই ইটের দেওয়ালে টালি বা টিনের ছাদ। পেশায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই কৃষিজীবী ও রাজমিস্ত্রি। শিক্ষার হার একটি গ্রামে ৪০ শতাংশ, অন্যটিতে ৩৮ শতাংশ। বিদ্যুৎ নেই, সড়ক নেই, নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলছেন, ‘‘বিদ্যুৎ যদি বাধা হয়, তবে ফর্ম সংগ্রহের শিবির করা যেতেই পারে। জেনারেটরের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারত। সেটা হলে সহস্রাধিক মহিলাকে অন্তত পদ্মা পেরিয়ে ৯ কিলোমিটার যেতে হয় না।’’ বিডিও উৎকর্ষ সিং অবশ্য জানিয়েছেন, কিছু সমস্যার জন্যই চরের ওই দুই গ্রামে দুয়ারে সরকার করা যাচ্ছে না।
এই জেলায় ভগবানগোলার আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মল চরের ছবিও একই রকম। চরের প্রায় হাজার দশেক মানুষের বাস। শিবির করার যাবতীয় পরিকাঠামো রয়েছে। অথচ কোমরজল পেরিয়ে ৫০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে আসতে হচ্ছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে। ডোমকলের মহকুমা শাসক রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘চরের মানুষকে যাতে আর এ পারে আসতে না হয়, তার জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। বন্যার জল নেমে যাওয়ার পরপরই আমরা চরে ক্যাম্প করব।’’