দুর্ভোগ: খেজুরির কাউখালি-অরকবাড়ি গ্রামে যোগাযোগের একমাত্র কাঠের সেতু ভেঙে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে এ ভাবেই যাতায়াত করছেন। নিজস্ব চিত্র।
ঘরদোর আর কিছু অবশিষ্ট নেই। যেখানটায় উঠোন ছিল, সেখানে পড়ে একটা আস্ত নৌকো। সমুদ্রের তাণ্ডবে ভেসে এসেছে।
কাউখালির কাছেই অরকবাড়ি গ্রাম। জায়গাটা পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি ২ ব্লকের অন্তর্গত। হাত বাড়ালেই বঙ্গোপসাগর। সেই সাগরের জলোচ্ছ্বাসেই ভিটেহারা গ্রামের অন্তত তিনশো পরিবার। যাতায়াতের কাঠের সাঁকোও আর নেই। কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে গিয়েছে জায়গাটা। ত্রাণ শিবির থেকে পাওয়া মুড়ি ফুরিয়েছে। এ দিকে, যাতায়াতের অসুবিধায় ত্রাণও আর এসে পৌঁছয়নি। অগত্যা গাছের খেজুর কুল খেয়ে পেট ভরাচ্ছেন অনেকে। আর তেষ্টা মেটাতে ভরসা পুকুরের পচা জল।
বিদ্যুতেরও কোনও বালাই নেই। খটি এলাকায় মৎস্য দফতর থেকে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সৌর বিদ্যুতের বহু প্যানেল জলে ভেসে গিয়েছে। তারই মধ্যে বেশ কিছু প্যানেল কুড়িয়ে গ্রামের ভেতরে এনে গুছিয়ে রেখেছেন বাসিন্দারা।
‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অরকবাড়ি গ্রামের নান্টু দেবী, রবীন্দ্রনাথ দোলইয়ের মতো অধিকাংশ বাসিন্দা। দুর্যোগ কাটতে গ্রামে ফিরেছেন। তবে আসতে হয়েছে ছোট খাল সাঁতরে। গ্রামের কাঠের সাঁকো যে জলে ভেসে গিয়েছে। আপাতত স্থানীয়রাই ইউক্যালিপটাস গাছের গুঁড়ি ফেলে চলাচলের একটা বন্দোবস্ত করেছেন। তবে যেতে হচ্ছে হামাগুড়ি দিয়ে। ত্রিপল টাঙিয়ে স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে আছেন পেশায় মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ। তিনি বললেন, ‘‘বাড়িঘর, জিনিসপত্র সব কিছুই ভেসে গিয়েছে। প্রশাসনের কারও দেখা নেই। গাছ থেকে খেজুর কুল তুলে চারজন খাচ্ছি।’’
খিদে মেটাতে গ্রামের অনেকেরই ভরসা এখন এই খেজুর কুল। আর পানীয় জল তো নেই। গ্রামের মহিলা নান্টু দেবী বললেন, ‘‘খাল সাঁতারে পানীয় জল আনতে যেতে হবে অন্য গ্রামে। সেখানেও পর্যাপ্ত জল নেই। তাই পুকুরের পচা জলই খাচ্ছি।’’ অরকবাড়ির গ্রামের সব ক’টা পুকুরেই গাছপালা পচে পড়েছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। সেই দূষিত জল পান করে কেউ কেউ পেটের অসুখেও ভুগছেন। কিন্তু ব্লিচিং ছড়ানো থেকে গ্রামে মেডিক্যাল টিম এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা—কিছুই হয়নি। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘অত আশা করি না। এখন সারা দিনে দু’হাতা খিচুড়ি আর জলের একটা বোতল পেলেই যথেষ্ট।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, আশপাশের অন্য গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে এসে খিচুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের গ্রামে আসারই যে জো নেই। খেজুরি ২-এর বিডিও পার্থ হাজরা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সব গ্রামেই ত্রাণ এবং রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কোনও নির্দিষ্ট গ্রামের লোক যদি বাদ পড়েন, তবে পঞ্চায়েতের থেকে জেনে দ্রুত খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’