বেঙ্গালুরু থেকে মালদহ

কাজ নেই, তাই ‘ঘর ওয়াপসি’

তিন মাস আগে কুড়ি জন শ্রমিককে তিনি পাঠিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে, আবাসন শিল্পে কাজ করার জন্য। এই তিন মাসে সময় অনেক বদলেছে। নোট বাতিলের জেরে যেমন কমেছে বাড়ির চাহিদা, তেমনই নগদে শ্রমিকদের মজুরি মেটানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারদের পক্ষে।

Advertisement

জয়ন্ত সেন (বেঙ্গালুরুগামী ট্রেন থেকে)

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

ট্রেনে রজিকুল শেখ। নিজস্ব চিত্র

তিন মাস আগে কুড়ি জন শ্রমিককে তিনি পাঠিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে, আবাসন শিল্পে কাজ করার জন্য। এই তিন মাসে সময় অনেক বদলেছে। নোট বাতিলের জেরে যেমন কমেছে বাড়ির চাহিদা, তেমনই নগদে শ্রমিকদের মজুরি মেটানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারদের পক্ষে। তাই কাজ হারিয়ে বসে রয়েছেন শ্রমিকরা। কয়েক জন ফিরে এসেছেন। আট জনের তো ঘরে ফেরার টাকাও নেই।

Advertisement

তাঁদেরই ফিরিয়ে আনতে বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন মালদহের মোজমপুর এলাকার ইমাম জায়গীরের রজিকুল শেখ। এবং ঘূর্ণিঝড় ভরদা-র দাপট মাথায় নিয়ে। ‘‘উপায় নেই। ওদের হাতে কোনও টাকাপয়সা নেই এখন। আর একটা দিন দেরি হলে না খেয়ে থাকতে হবে হয়তো,’’ বলছিলেন ওই যুবক।

তিন বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে শ্রমিক সরবরাহ করেন রজিকুল। আবাসন তৈরির কাজে তাঁর হাত ধরে মালদহ থেকে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছেন অনেক রাজমিস্ত্রি ও দিনমজুর। জানালেন, তিন মাস আগে মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুর, গোলাপগঞ্জ, ঘড়িয়ালচক গ্রাম থেকে তিনি শ্রমিকদের বেঙ্গালুরুতে পাঠিয়েছিলেন। রজিকুল বলছিলেন, ‘‘কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় গোটা শিল্পেরই এখন টলমল অবস্থা। তাতে অনেকের কাজ গিয়েছে। আবার মজুরি দিতে পারছে না বলেও অনেক ঠিকাদার ও নির্মাণ সংস্থা কাজ বন্ধ করে রেখেছে।’’

Advertisement

দু’টোর ফল অবশ্য একই— কাজ হারিয়েছেন শ্রমিকরা। বেঙ্গালুরুগামী ট্রেনে বসে রজিকুল বলছিলেন, ‘‘এদের কারও কারও হাতে অগ্রিমের টাকা ছিল। তাঁরা নিজেরা ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু আট জনের অবস্থা খুব খারাপ। তাঁদের হাত একেবারে খালি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নেই যে টাকা পাঠিয়ে দেব। বারবার ফোন করছেন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তাই বেঙ্গালুরু যাচ্ছি।’’

বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করতে যত শ্রমিক লাগে, তাঁদের মজুরির অর্ধেক টাকা রজিকুলরা অগ্রিম নিয়ে নেন দাদন হিসেবে। এই দাদন থেকে শ্রমিকদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে দেন তাঁরা। পরে বেঙ্গালুরু গেলে ১৫ দিন অন্তর বা মাসে মাসে মজুরির বাকি টাকা মেটানো হয়। কিন্তু নোট বাতিলের গেরোয় এক মাস ধরে সে ভাবে কাজই হচ্ছে না। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলা যাচ্ছে না। তাই অনেক ঠিকাদার বা নির্মাণ সংস্থা মজুরি দিতে পারছে না। তাতেই এই ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মহীন শ্রমিকদের।

কপালে চিন্তার ভাঁজ। রজিকুল বলছিলেন, ‘‘আমার কথা ভাবুন। এদের তো নিজের টাকায় ফিরিয়ে আনব। ফেরার ভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার খরচ আর পাব কি না, জানি না। কিন্তু এদের সঙ্গে সঙ্গে তো আমারও রোজগার গেল। বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, বোন নিয়ে এ বার সংসার চলবে কী করে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement