ফাইল চিত্র
অর্থসাহায্যের যে-হাত নবান্ন বাড়িয়ে দিয়েছে, তা আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে গৃহলক্ষ্মীরা কি অন্য সকলকে ছাড়িয়ে যাবেন? লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে গৃহবধূদের আবেদনের বহর দেখে এমনটাই হতে চলেছে বলে আশা করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে সরকারের অনুমানই সত্য হতে চলেছে। ওই প্রকল্প চালু হওয়ার পরে উৎসাহের যে-ঢল নেমেছে, তাতে অন্যান্য প্রকল্পের থেকে আবেদনকারিণীর সংখ্যা অনেকটাই ছাপিয়ে দু’কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।
সেই জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার বলেও মনে করছে প্রশাসন। এই অতি উৎসাহের ফলে যে-ঢল নেমেছে, সেখানে যাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা না-হয়, তার দিকে নজর দিতে চাইছেন প্রশাসনের কর্তারা। সোমবারের অভিজ্ঞতার পরে মঙ্গলবার ভিড় ব্যবস্থাপনায় পৃথক নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেওয়ার কথা উঠছে। যে-সব জেলার শিবিরে অনুমানের চেয়ে বেশি সংখ্যায় গৃহবধূরা আসছেন, সেখানে দরকারে শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। কিছু জেলা আবার ভিড় নিয়ন্ত্রণে আনতে শিবিরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকায় অফিসার পাঠিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র গ্রহণ করার পথে হাঁটছে।
ভিড় ঠেকাতে রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্প পৃথক রাখতে বলা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন শুরু করা হচ্ছে শিবির শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে। রেজিস্ট্রেশনের পরে কুপন পদ্ধতিও চালু করা হচ্ছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আলাদা শিবিরের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল আগেই।
এ বার ভিড় এড়াতে অন্যান্য শিবিরেও এই প্রকল্পের আবেদনপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “ভিড় এড়াতে শিবিরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। কাউন্টারের সংখ্যা বেড়েছে চালু শিবিরগুলিতে। দরকারে এই ধরনের আরও পদক্ষেপ করা হবে।”
সোমবার, দুয়ারে সরকারের প্রথম দিনে গোটা রাজ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ৭০% ছিল লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য। সরকারি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৩৫ লক্ষ মানুষ দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৩ লক্ষই লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রার্থী।
জেলার মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সেখানে এ দিন পর্যন্ত অন্তত ৪.৭২ লক্ষ মানুষ শিবিরগুলিতে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন এসেছে প্রায় ৫.৪৭ লক্ষ। আবেদনপত্রের মধ্যে প্রায় ৩.৪১ লক্ষই লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, চলতি আর্থিক পরিস্থিতিতে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই তা রাজ্যের আর্থিক গতিবিধিকে চাঙ্গা করবে। সেই পথে হাঁটতে চাইছে রাজ্য সরকারও। পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা, এ ক্ষেত্রে মহিলাদের হাতে নগদ পৌঁছে দেওয়া গেলে তার সদ্ব্যবহার হবে সব চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে তৃণমূল সরকারের এই সামাজিক প্রকল্পটি আখেরে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে।
গত বার দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আবেদনকারীদের আগ্রহ সব চেয়ে বেশি ছিল। সে-বার বেশির ভাগ মহিলা উপভোক্তাকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দিয়েছিল রাজ্য।